পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ vé8ግ তাহার সমস্ত হতবুদ্ধি অন্ত:করণ একটা কলেবরহীন নিদারুণ প্রতিকূলতাকে যেন কেবলই প্রাণপণে ঠেলা মারিতেছিল— কিন্তু কোথাও এক তিলও তাহাকে টলাইতে পারিতেছিল না । যে বাসায় তাহার মা থাকেন, এতদিন যে বাসায় পা দিবামাত্র কর্মক্ষেত্রের সমস্ত ক্লাস্তি ও সংঘাতের বেদন মুহূর্তের মধ্যেই তাহার দূর হইয়া গিয়াছে, সেই বাসার সম্মুখে গাড়ি আসিয়া দাড়াইল— গাড়োয়ানের ভাড়া চুকাইয়া দিয়া সেই বাসার মধ্যে সে অপরিমেয় নৈরাপ্ত ও ভয় লইয়া প্রবেশ করিল। মা উদবিগ্ন হইয়া বারান্দায় দাড়াইয়া ছিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাবা, কোথায় গিয়াছিলে ।” হরলাল বলিয়া উঠিল, “মা, তোমার জন্য বউ আনিতে গিয়াছিলাম।” বলিয়া শুষ্ককণ্ঠে হাসিতে হাসিতে সেইখানেই মূছিত হইয়া পড়িয়া গেল । “ও মা, কী হইল গে|” বলিয়া মা তাড়াতাড়ি জল আনিয়া তাহার মুখে জলের ঝাপটা দিতে লাগিলেন । কিছুক্ষণ পরে হরলাল চোখ খুলিয়া শূন্তদৃষ্টিতে চারি দিকে চাহিয়া উঠিয়া বসিল । হরলাল কহিল, “মা, তোমরা ব্যস্ত হইয়ো না। আমাকে একটু একলা থাকিতে দাও।” বলিয়া সে তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই ভিতর হইতে দরজা বন্ধ করিয়া দিল । মা দরজার বাহিরে মাটির উপর বসিয়া পড়িলেন— ফাঙ্কনের রৌদ্র তাহার সর্বাঙ্গে আসিয়া পড়িল । তিনি রুদ্ধ দরজার উপর মাথা রাখিয়া থাকিয়া থাকিয়া কেবল ডাকিতে লাগিলেন, “হরলাল, বাবা হরলাল ।” হরলাল কহিল, “ম, একটু পরেই আমি বাহির হইব, এখন তুমি যাও।” মা রৌদ্রে সেইখানেই বসিয়া জপ করিতে লাগিলেন । আপিসের দরোয়ান অসিয়া দরজায় ঘা দিয়া কহিল, “বাৰু, এখনি না বাহির হইলে আর গাড়ি পাওয়া যাইবে না।” হরলাল ভিতর হইতে কহিল, "আজ সাতটার গাড়িতে যাওয়া হইবে না।” দরোয়ান কহিল, “তবে কখন যাইবেন ।” হরলাল কহিল, “সে আমি তোমাকে পরে বলিব ।” দরোয়ান মাথা নাড়িয়া হাত উলটাইয়া নীচে চলিয়া গেল । হরলাল ভাবিতে লাগিল, এ কথা বলি কাহাকে। এ যে চুরি। বেণুকে কি জেলে দিব ।’ হঠাৎ সেই গহনার কথা মনে পড়িল। সে কথাটা একেবারেই ভুলিয়া গিয়াছিল। মনে হইল যেন কিনারা পাওয়া গেল। ব্যাগ খুলিয়া দেখে তাহার মধ্যে শুধু আংটি