পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ \లి( ) হরলাল কোনো উত্তর না দিয়া মুখ নিচু করিয়া বসিয়া রহিল। সাহেব । তোমার জ্ঞাতসারে এ টাকা কেহ লইয়াছে ? হরলাল কহিল, “আমার প্রাণ থাকিতে আমার জ্ঞাতসারে এ টাকা কেহ লইতে পারিত না ।” বড়োসাহেব কহিলেন, “দেখে হরলাল, আমি তোমাকে বিশ্বাস করিয়া কোনো জামিন না লইয়া এই দায়িত্বের কাজ দিয়াছিলাম। আপিসের সকলেই বিরোধী ছিল। তিন হাজার টাকা কিছুই বেশি নয়। কিন্তু তুমি আমাকে বড়ো লজ্জাতেই ফেলিবে । আজ সমস্ত দিন তোমাকে সময় দিলাম— যেমন করিয়া পার টাকা সংগ্ৰহ করিয়া আনো— তাহা হইলে এ লইয়। কোনো কথা তুলিব না, তুমি যেমন কাজ করিতেছ তেমনি করিবে ।” এই বলিয়া সাহেব উঠিয়া গেলেন। তখন বেল এগারোটা হইয়া গেছে । হরলাল যখন মাথা নিচু করিয়া বাহির হইয়া গেল তখন আপিসের বাবুরা অত্যন্ত খুশি হইয়৷ হরলালের পতন লইয়া আলোচনা করিতে লাগিল। 囑 হরলাল একদিন সময় পাইল। আরো একটা দীর্ঘ দিন নৈরাশ্বের শেষতলের পঙ্ক আলোড়ন করিয়া তুলিবার মেয়াদ বাড়িল । উপায় কী, উপায় কী, উপায় কী— এই ভাবিতে ভাবিতে সেই রৌদ্রে হরলাল রাস্তায় বেড়াইতে লাগিল। শেষে উপায় আছে কি না সে ভাবনা বন্ধ হইয়া গেল কিন্তু বিনা কারণে পথে ঘুরিয়া বেড়ানো থামিল না। যে কলিকাতা হাজার হাজার লোকের আশ্রয়স্থান তাহাই এক মুহূর্তে হরলালের পক্ষে একটা প্রকাও ফাসকলের মতে হইয়া উঠিল। ইহার কোনো দিকে বাহির হইবার কোনো পথ নাই। সমস্ত জনসমাজ এই অতিক্ষুদ্র হরলালকে চারি দিকে আটক করিয়া দাড়াইয়াছে। কেহ তাহাকে জানেও না, এবং তাহার প্রতি কাহারো মনে কোনো বিদ্বেষও নাই, কিন্তু প্রত্যেক লোকেই তাহার শক্র । অথচ রাস্তার লোক তাহার গা ঘেষিয় তাহার পাশ দিয়া চলিয়াছে ; আপিসের বাবুরা বাহিরে অসিয়া ঠোঙায় করিয়া জল খাইতেছেন, তাহার দিকে কেহ তাকাইতেছেন না ; ময়দানের ধারে অলস পথিক মাথার নীচে হাত রাখিয়া একটা পায়ের উপর আর-একটা পা তুলিয়া গাছের তলায় পড়িয়া আছে ; স্তাকরাগাড়ি ভরতি করিয়া হিন্দুস্থানী মেয়ের কালীঘাটে চলিয়াছে ; একজন চাপরাসি একখানা চিঠি লইয়া হরলালের সম্মুখে ধরিয়া কহিল, “বাৰু, ঠিকানা পড়িয়া দাও”— যেন তাহার সঙ্গে অন্য পথিকের কোনো প্রভেদ নাই ; সেও ঠিকানা পড়িয়া তাহাকে বুঝাইয়৷ দিল। ক্রমে আপিস বন্ধ হইবার সময় আসিল। বাড়িমুখে৷ গাড়িগুলো