পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ \O&@. সন্ন্যাসী কহিলেন, “বৎস, আমি বলিতেছি, তোমার স্বাহ হারাইয়াছে সেজন্য তুমি আনন্দ করে, শোক করিয়ে না।” মৃত্যুঞ্জয় তাহার দুই পা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “আপনি তবে তো সমস্তই জানিয়াছেন– কেমন করিয়া হারাইয়াছে, কোথায় গেলে ফিরিয়া পাইব, তাহা না বলিলে আমি আপনার চরণ ছাড়িব না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “আমি যদি তোমার অমঙ্গল কামনা করিতাম তবে বলিতাম। কিন্তু ভগবতী দয়া করিয়া যাহা হরণ করিয়াছেন সেজন্ত শোক করিয়ো না।” মৃত্যুঞ্জয় সন্ন্যাসীকে প্রসন্ন করিবার জন্য সমস্তদিন বিবিধ উপচারে তাহার সেবা করিল। পরদিন প্রত্যুষে নিজের গোহাল হইতে লোটা ভরিয়া সফেন দুগ্ধ দুহিয়া লইয়া আসিয়া দেখিল, সন্ন্যাসী নাই । २ মৃত্যুঞ্জয় যখন শিশু ছিল, যখন তাহার পিতামহ হরিহর একদিন এই চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া তামাক খাইতেছিল, তখন এমনি করিয়াই একটি সন্ন্যাসী ‘জয় হোক, বাবা’ বলিয়া এই প্রাঙ্গণে আসিয়া দাড়াইয়াছিলেন । হরিহর সেই সন্ন্যাসীকে কয়েকদিন । বাড়িতে রাখিয়া বিধিমত সেবার দ্বারা সন্তুষ্ট করিল। বিদায়কালে সন্ন্যাসী যখন জিজ্ঞাসা করিলেন “বংস, তুমি কী চাও, হরিহর কহিল, “বাবা যদি সন্তুষ্ট হইয়া থাকেন তবে আমার অবস্থাটা একবার শুকুন। এককালে এই গ্রামে আমরা সকলের চেয়ে বর্ধিষ্ণু ছিলাম। আমার প্রপিতামহ দূর হইতে কুলীন আনাইয় তাহার এক কস্তার বিবাহ দিয়াছিলেন। র্তাহার সেই দৌহিত্রবংশ আমাদিগকেই ফাকি দিয়া আজকাল এই গ্রামে বড়োলোক হইয়া উঠিয়াছে। আমাদের এখন অবস্থা ভালো নয়, কাজেই ইহাদের অহংকার সহ করিয়া থাকি। কিন্তু আর সহ হয় না। কী করিলে আবার আমাদের বংশ বড়ো হইয়া উঠবে সেই উপায় বলিয়া দিন, সেই আশীৰ্বাদ করুন।” . সন্ন্যাসী ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “বাবা, ছোটো হইয়া মুখে থাকে। বড়ো হইবার চেষ্টায় শ্রেয় দেখি না।” কিন্তু হরিহর তবু ছাড়িল না, বংশকে বড়ো করিবার জন্ত সে সমস্ত স্বীকার করিতে রাজি আছে। তখন সন্ন্যাসী তাহার ঝুলি হইতে কাপড়ে মোড় একটি তুলট কাগজের লিখন বাহির করিলেন। কাগজখানি দীর্ঘ, কোষ্ঠীপত্রের মতো গুটানো। সন্ন্যাসী সেটি