গল্পগুচ্ছ ৩৬৭ ঘুম হইতে যখন জাগিল তখন রাত্রি কি দিন কি কত বেলা তাহ জানিবার কোনো উপায় ছিল না। অত্যন্ত ক্ষুধা বোধ হইলে মৃত্যুঞ্জয় চাদরের প্রাস্ত হইতে চিড় খুলিয়া লইয়া খাইল । তাহার পর আর-একবার হাতড়াইয়া স্বরঙ্গ হইতে বাহির হইবার পথ খুজিতে লাগিল। নানা স্থানে বাধা পাইয়া বসিয়া পড়িল। তখন চিৎকার করিয়া ডাকিল, “ওগো সন্ন্যাসী, তুমি কোথায় ।” তাহার সেই ডাক স্বরঙ্গের সমস্ত শাখাপ্রশাখা হইতে বারম্বার প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। অনতিদূর হইতে উত্তর আসিল, “আমি তোমার নিকটেই আছি- কী চাও বলো ।” মৃত্যুঞ্জয় কাতরস্বরে কহিল, “কোথায় ধন আছে আমাকে দয়া করিয়া দেখাইয়। দাও।” *g * তখন আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। মৃত্যুঞ্জয় বারম্বার ডাকিল, কোনো সাড়া পাইল না । দণ্ড প্রহরের দ্বারা অবিভক্ত এই ভূতলগত চিররাত্রির মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় আর-একবার ঘুমাইয়া লইল । ঘুম হইতে আবার সেই অন্ধকারের মধ্যে জাগিয়া উঠিল। চিৎকার করিয়ান্ডাকিল, “ওগো, আছ কি।” 瞬 নিকট হইতেই উত্তর পাইল, “এইখানেই আছি। কী চাও।” মৃত্যুঞ্জয় কহিল, “আমি আর-কিছু চাই না— আমাকে এই সুরঙ্গ হইতে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাও।” 亨 সন্ন্যাসী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি ধন চাও না ?” মৃত্যুঞ্জয় কহিল, “না, চাহি না ।” তখন চকুমকি ঠোকার শব্দ উঠিল এবং কিছুক্ষণ পরে আলো জলিল । সন্ন্যাসী কহিলেন, “তবে এসে মৃত্যুঞ্জয়, এই স্বরঙ্গ হইতে বাহিরে যাই।” মৃত্যুঞ্জয় কাতরম্বরে কহিল, “বাবা, নিতান্তই কি সমস্ত ব্যর্থ হইবে। এত কষ্টের পরেও ধন কি পাইব না।” তৎক্ষণাং মশাল নিবিয়া গেল। মৃত্যুঞ্জয় কহিল, "কী নিষ্ঠুর।” বলিয়৷ সেইখানে বসিয়া পড়িয়া ভাবিতে লাগিল। সময়ের কোনো পরিমাণ নাই, অন্ধকারের কোনো অস্ত নাই । মৃত্যুঞ্জয়ের ইচ্ছা করিতে লাগিল তাহার সমস্ত শরীর-মনের বলে এই অন্ধকারটাকে ভাঙিয়া চূর্ণ করিয়া ফেলে। আলোক আকাশ আর বিশ্বচ্ছবির বৈচিত্র্যের জন্য তাহার প্রাণ ব্যাকুল হইয়। উঠিল, কহিল, "ওগো সন্ন্যাসী, ওগো নিষ্ঠুর সন্ন্যাসী, আমি ধন চাই না, আমাকে উদ্ধার করে।”
