পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

அச8 রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন রাসমণি আবার কঠিন হইয়া উঠিলেন– কঠোরস্বরে কহিলেন, “তুমি রাগই কর অার কান্নাকাটিই কর, যাহ। পাইবার নয় তাহা কোনোমতেই পাইবে না।” এই বলিয়া আর বৃথা সময় নষ্ট না করিয়া দ্রুতপদে গৃহকর্মে চলিয়া গেলেন। কালীপদ বাহিরে গেল। তখন ভবানীচরণ একলা বসিয়া তামাক খাইতেছিলেন। দূর হইতে কালীপদকে দেখিয়াই তিনি তাড়াতাড়ি উঠিয়া যেন একটা বিশেষ কাজ আছে এমনি ভাবে কোথায় চলিলেন । কালীপদ চুটিয়া আসিয়া কহিল, “বাবা, আমার সেই মেম—” আজ আর ভবানীচরণের মুখে হাসি বাহির হইল না। কালীপদর গলা জড়াইয়া ধরিয়া কহিলেন, “রোস বাবা, আমার একটা কাজ আছে— সেরে আসি, তার পরে সব কথা হবে।” বলিয়া তিনি বাড়ির বাহির হইয়। পড়িলেন । কালীপদর মনে হইল, তিনি যেন তাড়াতাড়ি চোখ হইতে জল মুছিয়া ফেলিলেন । তখন পাড়ার এক বাড়িতে পরীক্ষা করিয়া উৎসবের বঁাশির বায়ন করা হইতেছিল। সেই রসনচৌকিতে সকালবেলাকার করুণস্বরে শরতের নবীন রেীন্দ্ৰ যেন প্রচ্ছন্ন অশ্রুভারে ব্যথিত হইয়া উঠিতেছিল। কালীপদ তাহাদের বাড়ির দরজার কাছে দাড়াইয়া চুপ করিয়া পথের দিকে চাহিয়া রহিল। তাহার পিতা যে কোনো কাজেই কোথাও যাইতেছেন না, তাহা তাহার গতি দেখিয়াই বুঝা যায়— প্রতি পদক্ষেপেই তিনি যে একটা নৈরাষ্ঠ্যের বোঝা টানিয়া টানিয়া চলিয়াছেন এবং তাহ কোথাও ফেলিবার স্থান নাই, তাহ তাহার পশ্চাৎ হইতে ও স্পষ্ট দেখা যাইতেছিল। কালীপদ অন্তঃপুরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “মা, আমার সেই পাথা-করা মেম 5ांझे मां ।” মা তখন জাতি লইয়া ক্ষিপ্ৰহন্তে স্বপারি কাটিতেছিলেন । র্তাহার মুখ উজ্জল হইয়া উঠিল । ছেলেতে মায়েতে সেইখানে বসিয়া কী একটা পরামর্শ হইয়া গেল তাহ কেহই জানিতে পারিল না। জাতি রাখিয়া ধামা-ভরা কাটা ও আকাটা স্বপুরি ফেলিয়া রাসমণি তখনি বগলাচরণের বাড়ি চলিয়া গেলেন। অাজ ভবানীচরণের বাড়ি ফিরিতে অনেক বেলা হইল। স্নান সারিয়া যখন তিনি খাইতে বসিলেন তখন তাহার মুখ দেখিয়া বোধ হইল আজও দধি-পায়সের সদগতি হইবে না, এমন-কি, মাছের মুড়াটা আজ সম্পূর্ণই বিড়ালের ভোগে লাগিবে । তখন দড়ি দিয়া মোড়া কাগজের এক বাক্স লইয়। রাসমণি র্তাহার স্বামীর সম্মুখে অনিয়া উপস্থিত করিলেন । আহারের পরে যখন ভবানীচরণ বিঙাম করিতে যাইবেন