পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ శ్రీbrసి লোক হইবার কোনো দরকার করে না। অহংকার জিনিসটা হাতিষোড়ার মতো নয় ; তাহাকে নিতান্তই অল্প খরচে ও বিনা খোরাকে বেশ মোটা করিয়া রাখা যায়। কিন্তু শৈলেক্সের ব্যয় করিবার সামর্থ্য ও প্রবৃত্তি ছিল— এইজন্য আপনার অহংকারটাকে সে সম্পূর্ণ বিনা খরচে চরিয়া খাইতে দিত না ; দামী খোরাক দিয়া তাহাকে সুন্দর সুসজ্জিত করিয়া রাখিয়াছিল। বস্তুত শৈলেন্দ্রের মনে দয়া যথেষ্ট ছিল। লোকের দুঃখ দূর করিতে সে সত্যই ভালোবাসিত। কিন্তু এত ভালোবাসিত যে, যদি কেহ দুঃখ দূর করিবার জন্ত তাহার শরণাপন্ন না হইত তাহাকে সে বিধিমতে দুঃখ না দিয়া ছাড়িত না । তাহার দয়। যখন নির্দয় হইয়া উঠিত তখন বড়ো ভীষণ আকার ধারণ করিত। মেসের লোকদিগকে থিয়েটার দেখানো, পাঠা খাওয়ানো, টাকা ধার দিয়া সে কথাটাকে সর্বদা মনে করিয়া না রাখা— তাহার দ্বারা প্রায়ই ঘটিত । নবপরিণীত মুগ্ধ যুবক পূজার ছুটিতে বাড়ি যাইবার সময় কলিকাতার বাসাখরচ সমস্ত শোধ করিয়া যখন নিঃস্ব হইয়া পড়িত তখন বধূর মনোহরণের উপযোগী শৌখিন সাবান এবং এসেন্স, আর তারই সঙ্গে এক-আধখানি হালের আমদানি বিলাতি ছিটের জ্যাকেট সংগ্ৰহ করিবার জন্ত তাহাকে অত্যন্ত বেশি দুশ্চিন্তায় পড়িতে হইত না । শৈলেনের স্বরুচির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া সে বলিত, “তোমাকেই কিন্তু ভাই, পছন্দ করিয়া দিতে হইবে।” দোকানে তাহাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া নিজে নিতান্ত সস্তা এবং বাজে জিনিস বাছিয়া তুলিত ; তখন শৈলেন তাহাকে ভৎসনা করিয়া বলিত, “আরে ছি ছি, তোমার কিরকম পছন্দ।” বলিয়া সব চেয়ে শৌখিন জিনিসটি টানিয়া তুলিত । দোকানদার আসিয়া বলিত, “হা, ইনি জিনিস চেনেন বটে।” খরিদার দামের কথা আলোচনা করিয়া মুখ বিমৰ্ষ করিতেই শৈলেন দাম চুকাইবার অকিঞ্চিৎকর ভারট নিজেই লইত— অপর পক্ষের ভূয়োভূয়: আপত্তিতেও কর্ণপাত করিত না । এমনি করিয়া,যেখানে শৈলেন ছিল সেখানে সে চারি দিকের সকলেরই সকল বিষয়ে আশ্রয়স্বরূপ হইয়া উঠিয়াছিল। কেহ তাহার আশ্রয় স্বীকার না করিলে তাহার সেই ঔদ্ধত্য সে কোনোমতেই সহ করিতে পারিত না । লোকের হিত করিবার শখ তাহার এতই প্রবল। বেচার কালীপদ নীচের স্যাতসেঁতে ঘরে ময়লা মাছুরের উপর বসিয়া একখানা ছেড়া গেঞ্জি পরিয়া বইয়ের পাতায় চোখ গুজিয়া দুলিতে ছলিতে পড়া মুখস্থ করিত। যেমন করিয়া হউক তাহাকে স্কলারশিপ পাইতেই হইবে। মা তাহাকে কলিকাতায় আসিবার পূর্বে মাথার দিব্য দিয়া বলিয়া দিয়াছিলেন