পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రీసి ఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি সে মিনতির স্বরে বলিত তবে ফল পাইত সন্দেহ নাই। কিন্তু উন্মত্তবং ক্রুদ্ধমূতি দেখিয়া শৈলেন অত্যন্ত ক্ষাপা হইয়া উঠিল। যদি তাহার বাড়ির দারোয়ান থাকিত তবে তাহাকে দিয়া এই অসভ্যকে কান ধরিয়া দূর করিয়া দিত সন্দেহ নাই । সকলেই দাড়াইয়া উঠিয়া একত্রে গর্জন করিয়া উঠিল, “কী বলেন মশায় । কিসের নোট ।” কালীপদ কহিল, “আমার বাক্স থেকে আপনারা নোট নিয়ে এসেছেন।” "এতবড়ো কথা ! আমাদের চোর বলতে চান !” - কালীপদর হাতে যদি কিছু থাকিত তবে সেই মুহূর্তেই সে খুনোখুনি করিয়া ফেলিত। তাহার রকম দেখিয়া চার-পাঁচজনে মিলিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিল। সে জালবদ্ধ বাঘের মতো গুমরাইতে লাগিল । এই অন্যায়ের প্রতিকার করিবার তাহার কোনো শক্তি নাই, কোনো প্রমাণ নাই– সকলেই তাহার সন্দেহকে উন্মত্তত বলিয়া উড়াইয়া দিবে। যাহারা তাহাকে মৃত্যুবাণ মারিয়াছে তাহারা তাহার ঔদ্ধত্যকে অসহ বলিয়া বিষম আস্ফালন করিতে লাগিল । * সে রাত্রি যে কালীপদর কেমন করিয়া কাটিল তাহ কেহ জানিতে পারিল না। শৈলেন একখানা একশো টাকার নোট বাহির করিয়া বলিল, “দাও, বাঙালটাকে দিয়ে এসো গে যাও।” সহচররা কহিল, "পাগল হয়েছ। তেজটুকু আগে মরুক— আমাদের সকলের কাছে একটা রিটন অ্যাপলজি আগে দিক, তার পরে বিবেচনা করে দেখা যাবে।” - যথাসময়ে সকলে শুইতে গেল এবং ঘুমাইয়া পড়িতেও কাহারো বিলম্ব হইল না । সকালে কালীপদর কথা প্রায় সকলে ভুলিয়াই গিয়াছিল। সকালে কেহ কেহ সিড়ি দিয়া নীচে নামিবার সময় তাহার ঘর হইতে কথা শুনিতে পাইল। ভাবিল হয়তে। উকিল ডাকিয়া পরামর্শ করিতেছে। দরজা ভিতর হইতে খিল-লাগানো । বাহিরে কান পাতিয়া যাহা শুনিল তাহার মধ্যে আইনের কোনো সংস্রব নাই, সমস্ত অসম্বন্ধ প্ৰলাপ | উপরে গিয়া শৈলেনকে খবর দিল । শৈলেন নামিয়া আসিয়া দরজার বাহিরে আসিয়া দাড়াইল। কালীপদ কী যে বকিতেছে ভালো বোঝা যাইতেছে না, কে ক্ষণে ক্ষণে “বাবা’ ‘বাবা’ করিয়া চীৎকার করিয়া উঠিতেছে। r ভয় হইল, হয়তো সে নোটের শোকে পাগল হইয়া গিয়াছে। বাহির হইতে দুই-তিনবার ডাকিল, “কালীপদবাবু।” কেহ কোনো সাড়া দিল না। কেবল সেই