পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8\9ჯ, রবীন্দ্র-রচনাবলী তরী-চালনায় নিযুক্ত, মাঝে মাঝে যাত্রার দফতর লেখা, কিছু-বা আহার, কিছু-ব তন্ত্রা । ক্ষুদ্র এক টুকরো সজনত নীচের পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ে উড়ে চলেছে অসীম জনশূন্ততায়। জাহাজ ক্রমে উধ্বতর আকাশে চড়ছে, হাওয়া চঞ্চল, তরী টলোমলো । ক্রমে বেশ একটু শীৰ্ত করে এল। নীচে পাথুরে পৃথিবী, রাজপুতানার কঠিন বন্ধুরতা শুষ্ক শ্ৰোতঃপথের শীর্ণ রেখাজালে অঙ্কিত, যেন গেরুয়া-পরা বিধবাভূমির নির্জলা একাদশীর চেহারা । অবশেষে অপরাহ্লে দূর থেকে দেখা গেল রুক্ষ মরুভূমির পাংগুল বক্ষে যোধপুর শহর। আর তারই প্রাস্তরে যন্ত্রপাখির ই-করা প্রকাগু নীড় । নেমে দেখি এখানকার সচিব কুনবার মহারাজ সিং সন্ত্ৰীক আমাদের অভ্যর্থনার জন্য উপস্থিত, তখনি নিয়ে যাবেন তাদের ওখানে চা-জলযোগের আমন্ত্রণে। শরীরের তখন প্রাণধারণের উপযুক্ত শক্তি কিছু ছিল, কিন্তু সামাজিকতার উপযোগী উদ্ভূত্ত ছিল না বললেই হয়। কষ্টে কর্তব্য সেরে হোটেলে এলুম। হোটেলটি বায়ুতরীযাত্রীর জন্তে মহারাজের প্রতিষ্ঠিত। সন্ধ্যাবেলায় তিনি দেখা করতে এলেন । র্তার সহজ সৌজন্য রাজোচিত। মহারাজ স্বয়ং উড়োজাহাজ-চালনায় স্বদক্ষ। তার যতরকম দুঃসাহসী কৌশল আছে প্রায় সমস্তই তার অভ্যস্ত ! পরের দিন ১২ই এপ্রেল ভোর রাত্রে জাহাজে উঠতে হল। হাওয়ার গতিক পূর্বদিনের চেয়ে ভালোই। অপেক্ষাকৃত স্থস্থ শরীরে মধ্যাহ্নে করাচিতে পুরবাসীদের আদর-অভ্যর্থনার মধ্যে গিয়ে পৌছনো গেল। সেখানে বাঙালি গৃহলক্ষ্মীর সযত্নপক অন্ন ভোগ করে আধ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজে উঠে পড়লুম। f সমুদ্রের ধার দিয়ে উড়ছে জাহাজ। বা দিকে নীল জল, দক্ষিণে পাহাড়ে মরুভূমি। যাত্রার শেষ অংশে বাতাস মেতে উঠল। ডাঙায় বাতাসের চাঞ্চল্য নানা পদার্থের উপর আপন পরিচয় দেয়। এখানে তার একমাত্র প্রমাণ জাহাজটার ধড়ফড়ানি । বহুদূর নীচে সমুদ্রে ফেনার সাদা রেখায় একটু একটু তুলির পোচ দিচ্ছে। তার না শুনি গর্জন, না দেখি তরঙ্গের উত্তালত । এইবার মরুদ্বার দিয়ে পারস্তে প্রবেশ। বুশেয়ার থেকে সেখানকার গবর্নর বেতারে দূরলিপিযোগে অভ্যর্থন পাঠিয়েছেন। করাচি থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই বোমতরী