পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারস্তে 88& আমি এই কথা বলি, এশিয়া যদি সম্পূর্ণ না জাগতে পারে তা হলে যুরোপের পরিত্রাণ নেই। এশিয়ার দুর্বলতার মধ্যেই যুরোপের মৃত্যুবাণ। এই এশিয়ার ভাগবাটোয়ার নিয়ে যত তার চোখ-রাঙারাঙি, তার মিথ্যা কলঙ্কিত কৃট কৌশলের গুপ্তচরবৃত্তি। ক্রমে বেড়ে উঠছে সমরসজ্জার ভার, পণ্যের হাট বহুবিস্তৃত করে অবশেষে আজ অগাধ ধনসমুদ্রের মধ্যে দুঃসহ করে তুলছে তার দারিদ্র্যতৃষ্ণা। নূতন যুগে মানুষের নবজাগ্ৰত চৈতন্তকে অভ্যর্থনা করবার ইচ্ছায় একদিন পূর্বএশিয়ায় বেরিয়ে পড়েছিলুম। তখন এশিয়ার প্রাচ্যতম আকাশে জাপানের জয়পতাকা উড়েছে, লঘু করে দিয়েছে এশিয়ার অবসাদচ্ছায়াকে । আনন্দ পেলুম, মনে ভয়ও হল। দেখলুম জাপান যুরোপের অস্ত্র আয়ত্ত করে এক দিকে নিরাপদ হয়েছে, তেমনি অন্য দিকে গভীরতর আপদের কারণ ঘটল। তার রক্তে প্রবেশ করেছে য়ুরোপের মারী, যাকে বলে ইস্পীরিয়ালিজম, সে নিজের চারি দিকে মথিত করে তুলছে বিদ্বেষ। তার প্রতিবেশীর মনে জ্বালা ধরিয়ে দিল। এই প্রতিবেশীকে উপেক্ষা করবার নয়, অার এই জালায় ভাবীকালের অগ্নিকাণ্ড কেবল সময়ের অপেক্ষা করে। ইতিহাসে ভাগ্যের অমুকুল হাওয়া নিরস্তর বয় না। এমন দিন আসবেই যখন আজ যে দুর্বল তারই কাছে কড়ায় গগুীয় হিসাব গনে দিতে হবে। কী করে মিলতে হয় জাপান ত৷ শিখল না, কী করে মারতে হয় য়ুরোপের কাছ থেকে সেই শিক্ষাতেই সে হাত পাকিয়ে নিলে। এই মার মাটির নীচে স্থড্রঙ্গ খুড়ে একদিন এসে ছোবল মারবে তারই বুকে । কিন্তু এতে রাষ্ট্রনৈতিক হিসাবের ভুল হল বলেই এটা শোচনীয় এমন কথা আমি বলি নে। আমি এই বলতে চাই, এশিয়ায় যদি নতুন যুগ এসেই থাকে তবে এশিয়া তাকে নতুন করে আপন ভাষা দিক। তা না করে যুরোপের পশুগর্জনের অনুকরণই যদি সে করে সেটা সিংহনাদ হলেও তার হার । ধার-কর৷ রাস্তা যদি গর্তের দিকে যাবার রাস্ত হয় তা হলে তার লজ্জা দ্বিগুণ মাত্রায় । যা হোক, এশিয়ার পশ্চিমপ্রান্ত যে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে তার খবর দূর থেকে শোনা যায়। যখন ভাবছিলুম তুরুস্ক এবার ডুবল তখন হঠাৎ দেখা দিলেন কামালপাশ । তখন তাদের বড়ো সাম্রাজ্যের জোড়াতাড়া অংশগুলো যুদ্ধের ধাক্কায় গেছে ভেঙে। সেটা শাপে বর হয়েছিল। শক্ত করে নতুন করে রাজ্যটাকে তার স্বাভাবিক ঐক্যে স্বপ্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তোলা সহজ হল ছোটো পরিধির মধ্যে। সাম্রাজ্য বলতে বোঝায়, যারা আত্মীয় নয় তাদের অনেককে দড়ির বাধনে বেঁধে কলেবরটাকে অস্বাভাবিক স্কুল করে তোলা। দুঃসময়ে বাধন যখন ঢিলে হয় তখন ওই অনাত্মীয়ের সংঘাত বঁচিয়ে আত্মরক্ষা দুঃসাধ্য হতে থাকে। তুরুস্ক হালকা হয়ে গিয়েই যথার্থ আঁট হয়ে উঠল। তখন ইংলণ্ড তাকে २२||७० 聰