পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী صطول 8 এখান থেকে আর এক ঘণ্টার পথ গিয়ে সাদাতাবাদ গ্রামে আমাদের মধ্যাহভোজন। একটি বড়ো রকমের গ্রাম, পথের দুই ধারে ঘনসংলগ্ন কঁচা ইটের ও মাটির ঘর, দোকান ও ভোজনশালা। পেরিয়ে গিয়ে দেখি পথের ধারে ডান পাশে মাটি ছেয়ে নানা রঙের মেঠোফুল ভিড় করে আছে। দীর্ঘ এলম্ বনস্পতির ছায়াতলে তৰী জলধারা স্নিগ্ধ কলশকে প্রবাহিত । এই রমণীয় উপবনে ঘাসের উপর কাপেট বিছিয়ে আহার হল । পোলাও মাংস ফল ও যথেষ্ট পরিমাণে ঘোল । আকাশে মেম্ব জমে আসছে। এখান থেকে নব্বই মাইল পরে অাবাদে-নামক ছোটো শহর, সেখানে রাত্রিযাপনের কথা। দূরে দেখা যাচ্ছে তুষাররেখার-তিলককাটা গিরিশিখর। দেহ বিদ গ্রাম ছাড়িয়ে স্বৰ্মাকে পৌছলুম। পথের মধ্যে সেখানকার প্রধান রাজকর্মচারী অভ্যর্থনা জানিয়ে আগে চলে গেলেন। বেলা পাচটার সময় পৌছলুম পুরপ্রাসাদে। কাল ভোরের বেলা রওনা হয়ে ইস্ফাহানে পৌঁছব দ্বিপ্রহরে। ষার খাটি ভ্রমণকারী তারা জাতই আলাদা। এক দিকে তাদের শরীর মন চিরচলিষ্ণু, আর-এক দিকে অনভ্যস্তের মধ্যে তাদের সহজ বিহার। যারা শরীরটাকে স্তন্ধ রেখে মনটাকে চালায় তারা অন্য শ্রেণীর লোক। অথচ রেলগাড়ি-মোটরগাড়ির মধ্যস্থতায় এই দুই জাতের পঙক্তিভেদ রইল না। কুনো মানুষের ভ্রমণ আপন কোণ থেকে আপন কোণেই আসবার জন্তে । আমাদের আধ্যাত্মিক ভাষায় যাদের বলে কনিষ্ঠ অধিকারী। তারা বাধা রাস্তায় সস্তায় টিকিট কেনে, মনে করে মুক্তিপথে ভ্রমণ সারা হল, কিন্তু ঘটা করে ফিরে আসে সেই আপন সংকীর্ণ আড্ডায়, লাভের মধ্যে, হয়তো সংগ্রহ করে অহংকার । ভ্রমণের সাধনা আমার ধাতে নেই, অন্তত এই বয়সে। সাধক যারা, দুর্গমতার কৃচ্ছ্বসাধনে তাদের স্বভাবের আনন্দ, পথ খুজে বের করবার মহৎ ভার তাদের উপর। তারা শ্রেষ্ঠ অধিকারী, ভ্রমণের চরম ফল তারাই পায় । আমি আপাতত মোটরে চড়ে চললেম ইস্ফাহানে । w সকালবেলা মেঘাচ্ছন্ন, কাল বিকেল থেকেই তার আয়োজন। আজ শীত পড়েছে রীতিমত। একঘেয়ে শূন্তপ্রায় প্রাস্তরে আসন্ন বৃষ্টির ছায় বিস্তীর্ণ। দিগন্তু বেষ্টন করে যে গিরিমালা, নীলাভ অস্পষ্টতায় সে অবগুষ্ঠিত । ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলেছি অন্তহীন, আলেয়-চিহ্ন-হীন মাঠের মধ্যে বিসপিত পথ দিয়ে। কিন্তু মানুষ কোথায়। চাষী কেন হাল লাঙল নিয়ে মাঠে আসে না । হাটের দিন হাট করতে যায় না কেউ ; ফসলের খেত নিড়োবার বুঝি দরকার নেই ? দূরে দূরে বন্দুকধারী পাহারাওয়াল দাড়িয়ে, তার থেকে আন্দাজ করা যায় ওই দিগন্তের বাইরে অদৃপ্ত নেপথ্যে কোথাও