পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

84 e. রবীজ-রচনাবলী . মন্ত স্থসজ্জিত প্রাসাদ । যিনি গবর্নর তিনি ধীর সুগভীর, শান্ত তার সৌজন্ত, এর মধ্যে প্রাচ্যপ্রকৃতির মিতভাষী আচঞ্চল আভিজাত্য । শুনতে পাই এই বাড়ির যিনি মালিক তিনি আমাদের দেশের সেকেলে কোনো কোনো ডাকাতে জমিদারদের মতো ছিলেন। একদা এখানে সশস্ত্ৰে সসৈন্তে অনেক দৌরাত্ম্য করেছেন। এখন অস্ত্র সৈন্ত কেড়ে নিয়ে তাকে তেহেরানে রাখা হয়েছে, কারাবন্দীরূপে নয়, নজরবন্দীরূপে। তার ছেলেদের যুরোপে শিক্ষার জন্যে পাঠানে৷ হয়েছে। ভারত গবর্মেন্টের শাসননীতির সঙ্গে কিছু প্রভেদ দেখছি। মোহ মেরার শেখ, গবর্মেন্টের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উত্তেজিত করবার চেষ্টা করাতে রাজা সৈন্ত নিয়ে তাকে আক্রমণের উদ্যোগ করেন। তখন শেখ সন্ধির প্রার্থনা করতেই সে প্রার্থনা মঞ্জুর হল। এখন তিনি তেহেরানে বাসা পেয়েছেন। তার প্রতি নজর রাখা হয়েছে, কিন্তু তার গলায় ফাস বা হাতে শিকল চড়ে নি। " هيه - অপরাহ্লে যখন শহরে প্রবেশ করেছিলুম তখন ক্লাস্ত দৃষ্টি প্রান্ত মন ভালো করে কিছুই গ্রহণ করতে পারে নি। আজ সকালে নির্মল আকাশ, স্নিগ্ধ রৌত্র। দোতলায় একটি কোণের বারান্দায় বসেছি। নীচের বাগানে এলম্ পপলার উইলো গাছে বেষ্টিত ছোটাে জলাশয় ও ফোয়ারা। দূরে গাছপালার মধ্যে একটি মসজিদের চূড়৷ দেখা যাচ্ছে, যেন নীলপদ্মের কুঁড়ি, সুচিক্কণ নীল পারসিক টালি দিয়ে তৈরি, এই সকালবেলাকার পাতলা মেঘে-ছোওয়া আকাশের চেয়ে ঘনতর নীল। সামনেকার কাকর-বিছানো রাস্তায় সৈনিক প্রহরী পায়চারি করছে। এ-পর্যন্ত সমস্ত পারস্তে দেখে আসছি এর বাগানকে কী ভালোই না বাসে। এখানে চারি দিকে সবুজ রঙের দুভিক্ষ, তাই চোখের ক্ষুধা মেটাবার এই আয়োজন। বাবর ভারতবর্ষে বাগানের অভাব দেখে অবজ্ঞা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এসেছিলেন মরুপ্রদেশ থেকে, বাগান তাদের পক্ষে শুধু কেবল বিলাসের জিনিস ছিল না, ছিল অত্যাবগু্যক । তাকে বহুসাধনায় পেতে হয়েছে বলে এত ভালোবাসা । বাংলাদেশের মেয়েরা পশ্চিমের মেয়েদের মতো পরবার শাড়িতে রঙের সাধনা করে না, চারি দিকেই রঙ এত সুলভ। বাংলায় দোলাই-কাথায় রঙ ফলে ওঠে নি, লতাপাতার রঙিন ছাপওয়াল ছিট পশ্চিমে। বাড়ির দেয়ালে রঙ লাগায় মারোয়াড়ি, বাঙালি লাগায় না। আজ সকালবেলায় স্বান করবার অবকাশ রইল না। একে একে এখানকার মূনিসিপালিটি, মিলিটারি-বিভাগ, শিক্ষাবিভাগ, বণিকসভা আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাতে এসেছিলেন । •