পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b"8 রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রভেদ বিস্তর। মনে রাখতে হবে, পারস্তের জনসংখ্যা এক কোটি বিশ লাখ, ভারতবর্ষের ত্রিশ কোটির উপর— এবং সেই ত্রিশ কোটি বহুভাগে বিভক্ত। পারস্তের সমস্যা অনেক বেশি সরল, কেননা আমরা জাতিতে ধর্মে ভাষায় এক। আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে শাসনব্যবস্থাকে নির্দোষ এবং সম্যক উপযোগী করে তোলা । আমি বললুম, দেশের প্রকাও আয়তনটাই তার প্রকাগু শত্রু। চীন ভারতবর্ষ তার প্রমাণ। জাপান ছোটো বলে এত শীঘ্ৰ বড়ো হয়েছে। স্বভাবতই ঐক্যবদ্ধ অন্ত সভ্যদেশের রাষ্ট্রনীতি ভারতবর্ষে খাটবে না। এখানকার বিশেষ নীতি নানা দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে এখানেই উদ্ভাবিত হবে। * তিনি চলে গেলে আমি বসে বসে ভাবতে লাগলুম ঐক্যটাই আমাদের দেশে সব প্রথম ও সব চেয়ে বেশি চাই, অথচ ওইটের বাধা আমাদের হাড়ে হাড়ে। ভারতীয় মুসলমানের গোড়ামি নিজের সমাজকে নিজের মধ্যে একান্ত কঠিন করে বাধে, বাইরেকে দূরে ঠেকায় ; হিন্দুর গোড়ামি নিজের সমাজকে নিজের মধ্যে হাজারখানা করে, তার উপরেও বাইরের সঙ্গে তার অনৈক্য। এই দুই বিপরীতধর্মী সম্প্রদায়কে নিয়ে আমাদের দেশ। এ যেন দুই যমজ ভাই পিঠে পিঠে জোড় ; একজনের প৷ ফেলা আর-একজনের পা ফেলাকে প্রতিবাদ করতেই আছে। দুইজনকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করাও যায় না, সম্পূর্ণ এক করাও অসাধ্য। কয়েকজন মোল্লা এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। প্রধান মোল্লা প্রশ্ন করলেন, নানা জাতির নানা ধর্মগ্রন্থে নানা পথ নির্দেশ করে, তার মধ্য থেকে সত্যপথ নির্ণয় করা যায় কী উপায়ে । আমি বললুম, ঘরের দরজা জানাল সব বন্ধ করে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে আলে৷ পাব কী উপায়ে তাকে কেউ উত্তর দেয় চকমকি ঠুকে— কেউ বলে তেলের প্রদীপ, কেউ বলে মোমের বাতি, কেউ বলে ইলেকৃট্রিক আলো জেলে। সেই-সব উপকরণ ও প্রণালী নানাবিধ, তার ব্যয় যথেষ্ট, তার ফল সমান নয়। ধারা পুথি সামনে রেখে কথা কয় না, যাঁদের সহজ বুদ্ধি, তারা বলে, দরজা খুলে দাও। ভালো হও, ভালোবাসো, ভালো করে, এইটেই হল পথ । যেখানে শাস্ত্র এবং তত্ত্ব এবং আচারবিচারের কড়াক্কড়ি সেখানে ধামিকদের অধ্যবসায় কথা-কাটাকাটি থেকে শুরু করে গলাকাটাকাটিতে গিয়ে পৌছয়। 品 মোল্লার পক্ষে তর্কের উদ্যম ফুরোয় নি, কিন্তু আমার আর সময় ছিল না।