পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و سرا8 আমাদের রাগরাগিণী স্বরসংগতিকে স্বীকার করেও আত্মরক্ষা করতে একেবারেই পারে না এ কথা জোর করে কে বলতে পারে। স্বাক্টর শক্তি কী লীলা করতে সমর্থ কোনো একটা বাধা নিয়মের দ্বারা আমরা আগে হতে তার সীমা নির্ণয় করতে পারি নে। কিন্তু স্বষ্টিতে নূতন রূপের প্রবর্তন বিশেষ শক্তিমান প্রতিভার দ্বারাই সাধ্য, আনাড়ির বা মাঝারি লোকের কর্ম নয়। যুরোপীয় সাহিত্যের যেমন তেমনি তার সংগীতেরও মস্ত একটা সম্পদ আছে। সে যদি আমরা বুঝতে না পারি তবে সে আমাদের বোধশক্তিরই দৈন্ত ; যদি তাকে গ্রহণ করা একেবারেই অসম্ভব হয় তবে তার দ্বারা আভিজাত্যের প্রমাণ হয় না । আজ ৬ই মে । যুরোপীয় পঞ্জিকার মতে আজ আমার জন্মদিন। আমার পারসিক বন্ধুরা এই দিনের উপর সকালবেলা থেকে পুষ্পবৃষ্টি করছেন। আমার চারি দিক ভরে গেছে নানাবর্ণের বসস্তের ফুলে, বিশেষত গোলাপে। উপহারও আসছে নানা রকমের। এখানকার গবর্মেণ্ট থেকে একটি পদক ও সেইসঙ্গে একটি ফর্মান পেয়েছি। বন্ধুদের বললুম, আমি প্রথমে জন্মেছি নিজের দেশে, সেদিন কেবল আত্মীয়েরা আমাকে স্বীকার করে নিয়েছিল। তার পরে তোমরা যেদিন আমাকে স্বীকার করে নিলে আমার সেদিনকার জন্ম সর্বদেশের— আমি দ্বিজ । অপরাহুে শিক্ষাবিভাগের মন্ত্রীর বাড়িতে চায়ের মজলিসে নিমন্ত্রণ ছিল। সে সভায় এ দেশের প্রধানগণ ও বিদেশের রাষ্ট্রপ্রতিনিধি অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে একজন পারসিক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে কথা উঠল, বহুকাল থেকে বারস্বার বিদেশী আক্রমণকারীদের, বিশেষত মোগল ও আফগানদের, হাত থেকে অতি নিষ্ঠুর আঘাত পাওয়া সত্বেও পারস্য যে আপন প্রতিভাকে সজীব রেখেছে এ অতি আশ্চর্য । তিনি বললেন, সমস্ত জাতিকে আশ্রয় করে পারস্তে যে ভাষা ও সাহিত্য বহমান তারই ধারাবাহিকতা পারস্তকে বাচিয়ে রেখেছে। অনাবৃষ্টির রুদ্রত যখন তাকে বাইরে থেকে পুড়িয়েছে তখন তার অস্তরের সম্বল ছিল তার আপন নদী। এতে শুধু যে পারস্তের আত্মস্বরূপকে রক্ষা করেছে তা নয়, যারা পারস্তকে মারতে এসেছিল তারাই পারস্তের কাছ থেকে নূতন প্রাণ পেলে— আরব থেকে আরম্ভ করে মোগল পর্যস্ত । * আরবরা তুকিরা মোগলরা এসেছিল দানশূন্ত হস্তে, কেবলমাত্র অস্ত্র নিয়ে। আরব পারস্যকে ধর্ম দিয়েছে, কিন্তু পারস্য আরবকে দিয়েছে আপন নামা বিদ্যা ও শিল্পসম্পন্ন সভ্যতা। ইসলামকে পারস্ত ঐশ্বর্যশালী করে তুলেছে।