পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bኅ፡” রবীন্দ্র-রচনাবলী বৃহৎ জনতা অপেক্ষ করছে। এখানকার সাহিত্যসভার নিমন্ত্রণে সকলে আহুত । আমার তরফে ছিল সাহিত্যতত্ত্ব নিয়ে ইংরেজিতে বক্তৃতার ধারা, আর এদের তরফে ছিল তারই মাঝে মাঝে এপারে ওপারে পারসিক ভাষার সাকে বেঁধে দেওয়া । পথিকের মতো পথ চলতে চলতে আমি আজ এখানকার ছবি দেখতে দেখতে চলেছি। সম্পূর্ণ করে কিছু দেখবার সময় নেই। আমার মনে যে ধারণাগুলো হচ্ছে সে দ্রুত আভাসের ধারণা। বিচার করে উপলব্ধি নয়, কেবলমাত্র মানসিক হাত বুলিয়ে যাবার অনুভূতি। এই যেমন, সেদিন একজন মানুষের সঙ্গে হঠাৎ অল্পক্ষণের আলাপ হল । একটা ছায়াছবি মনে রয়ে গেল, সেটা নিমেষকালের আলোতে তোলা । তিনি জ্যোতিবিজ্ঞানবিং গাণিতিক। সৌম্য র্তার মূর্তি, মুখে স্বচ্ছচিত্তের প্রকাশ। এর বেশ মোল্লার, কিন্তু এর বুদ্ধি সংস্কারমোহমুক্ত, ইনি আধুনিক অথচ চিরকালের পারসিক । ক্ষণকালের দেখাতেই এই মানুষের মধ্যে আমি পারস্তের আত্মসমাহিত স্বপ্রকৃতিস্থ মূতি দেখলুম, ষে পারস্তে একদা আবিসেন্না ছিলেন বিজ্ঞান ও তত্ত্বজ্ঞানের অদ্বিতীয় সাধক এবং জালালউদ্দিন গভীরতম আত্মোপলব্ধিকে সরসতম সংগীতে প্রবাহিত করেছিলেন। অধ্যাপক ফেরুধির কথা পূর্বেই বলেছি। তিনিও আমার মনে একটি চিত্র এ কে দিয়েছেন, সে চিত্রও চিত্তবান পারসিকের। অর্থাৎ এর স্বদেশীয় স্বভাব বিদেশীর কাছেও সহজে প্রকাশমান । যে মানুষ সংকীর্ণভাবে একান্তভাবে স্বাদেশিকতার মধ্যে বদ্ধ, তিনি স্বদেশকে প্রকাশ করেন না, কেননা, মূর্তি আপন দেশের মাটিতে গড় হলেও যে আলো তাকে প্রকাশ করবে সে আলো যে সার্বভৌমিক। *. তেহেরান থেকে বিদায় নেবার দিন এল, প্রধান মন্ত্রীবর্গ এসে অামাকে বিদায় দিলেন । જે বেলা আড়াইটার সময় যাত্রা করলুম। তেহেরান থেকে বেরিয়ে প্রথমটা পারস্তের নীরস নির্জন চেহারা আবার দেখা দিল, কিন্তু বেশিক্ষণ নয়। দৃগুপরিবর্তন হল। ফসলে সবুজ মাঠ, মাঝে মাঝে তরুসংহতি, যেখানে-সেখানে জলের চঞ্চল ধারা, মেটে ঘরের গ্রাম তেমন বিরল নয়। দিগন্তে বরফের আঙুল-বুলানো গিরিশিখর। স্থর্যাস্তের সময় কাজৰিন শহরে পৌছলুম। এখানে একটি হোটেলে আমাদের