পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় । Q)○ বিভাগেই ব্যাপ্ত। এই সাধনার দীক্ষ য়ুরোপের কাছ থেকে আমাদের নিতান্তই নেওয়া চাই। কিন্তু সেই সঙ্গেই মনে রাখতে হবে যে কেবলমাত্র বস্তুগত ঐশ্বর্ষে মানুষের পরিত্রাণ নেই, তার প্রমাণ আজ যুরোপে মারমূতি নিয়ে দেখা দিল। পরম্পর ঈর্ষাবিদ্বেষে এবং বিজ্ঞানবাহিনী হিংস্রতার বিভীষিকায় যুরোপীয় সুড়াতায় আজ ভূমিকম্প লেগেছে। যুরোপ দেবতার অস্ত্র পেয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে দেবতার চিত্ত পায় নি। এইরকম দুর্যোগেই বিমুখ ব্ৰহ্মাস্ত্র আসি অস্ত্রীকেই বধে । দেখা যাচ্ছে, য়ুরোপ নিজের মৃত্যুশেল আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক নৈপুণ্যের সঙ্গে তৈরি করে তুলছে। এশিয়াকে আজ ভার নিতে হবে মানুষের মধ্যে এই দেবত্বকে সম্পূর্ণ করে তুলতে, কর্মশক্তিকে ও ধর্মশক্তিকে এক করে দিয়ে । পারস্তে আজ নূতন করে জাতিরচনার কাজ আরম্ভ হয়েছে। আমার সৌভাগ্য এই যে, এই নবস্তুষ্টির যুগে অতিথিরূপে আমি পারস্যে উপস্থিত, আমি আশা করে এসেছি এখানে স্বষ্টির যে সংকল্পন দেখব তার মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার পূর্ণমিলনের রূপ আছে। অতীতকালে একদা এশিয়ায় স্বাক্টর যুগ প্রবল শক্তিতে দেখা দিয়েছিল। তখন পারস্য ভারত চীন নিজ নিজ জ্যোতিতে দীপ্যমান হয়ে একটি সম্মিলিত মহাদেশীয় সভ্যতার বিস্তার করেছিল। তখন এশিয়ায় মহতী বাণীর উদ্ভব হয়েছিল এবং মহতী কীর্তির। তখন মাঝে মাঝে এশিয়ার চিত্তে যেন কোটালের বান ডেকে এসেছে, তখন তার বিদ্যার ঐশ্বর্য বহু বাধা অতিক্রম করে বহুকাল ধরে বহুদূরদেশে পরিব্যাপ্ত হয়েছে । তার পর এল দুর্দিন, ঐশ্বর্যবিনিময়ের বাণিজ্যপথ ক্রমে লুপ্ত হয়ে এল। যুদ্ধে, দুভিক্ষে, বিশ্বনাশা বর্বরতার নিষ্ঠুর আক্রমণে এশিয়ার মহাদেশীয় বন্ধন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তার পর থেকে এশিয়াকে আর মানবিক মহাদেশ বলতে পারি নে— আজ এ কেবল ভৌগোলিক মহাদেশ। সেই প্রাচীনযুগের গৌরবকাহিনীর স্বপ্নমাত্র নিয়ে অতি দীর্ঘকাল আমাদের দীনভাবে কাটল। আজ এই মহাদেশের নাড়ীতে নাড়ীতে পুনরযৌবনের বেগ যেন আবার স্পন্দিত হয়ে উঠেছে। ভারতবর্ষের কবিকে আজ ইরান যে আহবান করেছে এ একটি স্বলক্ষণ ; এতে প্রমাণ হয় যে, এশিয়ায় আত্মপ্রকাশের দায়িত্ববোধ দেশের সীমানাকে অতিক্রম করে দূরে বিস্তীর্ণ হচ্ছে। এ কথা বলা বাহুল্য ষে, এশিয়ার প্রত্যেক দেশ আপন শক্তি প্রকৃতি ও প্রয়োজন