পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবীন Ե-VՑ এর একটা যা-হয় জবাব দিয়ে দাও । কে দেবে চাদ তোমায় দোল ১ আজ সব ভীরুদের ভয় ভাঙানো চাই। ওই মাধবীর দ্বিধা-যে ঘোচে না। এ দিকে আকাশে আকাশে প্ৰগলভতা অথচ ওরা রইল সসংকোচে ছায়ার আড়ালে। ওই অবগুষ্ঠিতাদের সাহস দাও। বেরিয়ে পড়বার হাওয়া বইল যে— বকুলগুলো রাশি রাশি ঝরতে ঝরতে বলছে ‘যা হয় তা হোক গে’, আমের মুকুল নিৰ্ভয়ে বলে উঠছে দিয়ে ফেলব একেবারে শেষ পর্যন্ত’। যে পথিক আপনাকে বিলিয়ে দেবার জন্যেই পথে বেরিয়েছে তার কাছে আত্মনিবেদনের থালি উপুড় করে দিয়ে তবে তাকে আনতে পারবে নিজের আঙিনায়। কৃপণতা করে সময় বইয়ে দিলে তো চলবে न1 ।। হে মাধবী, দ্বিধা কেন, আসিবে কি ফিরিবে কি দেখতে দেখতে ভরসা বেড়ে উঠছে, তাকে পাব না তো কী। যখন দেখা দেয় না তখনো যে সাড়া দেয় । যে পথে চলে সেখানে-যে তার চলার রঙ লাগে । যে আড়ালে থাকে তার ফাক দিয়ে আসে তার মালার গন্ধ। দুয়ারে অন্ধকার যদি-বা চুপচাপ থাকে, আঙিনায় হাওয়াতে চলে কানাকানি। পড়তে পারি নে সব অক্ষর, কিন্তু চিঠিখানা মনের ঠিকানায় এসে পৌছয়। লুকিয়েই ও ধরা দেবে এমনিতরো ওর ভাবখানা । সে কি ভাবে গোপন রবে লুকিয়ে হৃদয়-কাড় ১ এইবার বেড়া ভাঙল, দুর্বার বেগে । অন্ধকারের গুহায় অগোচরে জমে উঠেছিল বন্যার উপক্রমণিকা, হঠাৎ ঝর্না ছুটে বেরোল, পাথর গেল ভেঙে, বাধা গেল ভেসে । চরম যখন আসেন তখন এক-পা এক-পা পথ গুনে গুনে আসেন না । একেবারে বজে-শান-দে ওয়া বিদ্যুতের মতো, পুঞ্জ পুঞ্জ কালো মেঘের বক্ষ এক আঘাতে বিদীর্ণ করে আসেন। হৃদয় আমার, ওই বুঝি তোর ফাল্গুনী ঢেউ আসে, বেড়া-ভাঙার মাতন নামে উদাম উল্লাসে । তোমার মোহন এল সোহন বেশে, কুয়াশাভার গেল ভেসে, এল তোমার সাধনধন উদার আশ্বাসে । অরণ্যে তোর সুর ছিল না, বাতাস হিমে ভরা। জীর্ণ পাতায় কীর্ণ কানন, পুষ্পবিহীন ধরা।