পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b*8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এবার জাগ, রে হতাশ, আয় রে ছুটে অবসাদের বঁাধন টুটে, বুঝি এল তোমার পথের সাথি উতল উচ্ছ্বাসে ।২ উৎসবের সোনার কাঠি তোমাকে ছুয়েছে, চোখ খুলেছে ; এইবার সময় হল চার দিক দেখে নেবার। আজ দেখতে পাবে ওই, শিশু হয়ে এসেছে চির নবীন, কিশলয়ে তার ছেলেখেলা জমাবার জন্তে । তার দোসর হয়ে তার সঙ্গে যোগ দিল ওই স্কুর্যের আলো, সেও সাজল শিশু, সারাবেলা সে কেবল ঝিকিমিকি করছে। ওই তার কলপ্রলাপ । ওদের নাচে নাচে মর্মরিত হয়ে উঠল প্রাণগীতিকার প্রথম ধুয়োটি। ওরা অকণরণে চঞ্চল আবার একবার চেয়ে দেখো— অবজ্ঞায় চোখ ঝাপসা হয়ে থাকে, আজ সেই কুয়াশা যদি কেটে যায় তবে যাকে তুচ্ছ বলে দিনে দিনে এড়িয়ে গেছ তাকে দেখে নাও তার আপন মহিমায়। ওই দেখো ওই বনফুল, মহাপথিকের পথের ধারে ও ফোটে, র্তার পায়ের করুণ স্পশে সুন্দর হয়ে ওঠে ওর প্রণতি । সুর্যের আলো ওকে আপন বলে চেনে ; দখিন হাওয়া ওকে শুধিয়ে যায় 'কেমন আছ’। তোমার গানে আজ ওকে গৌরব দিক। এরা যেন কুরুরাজের সভায় শূদ্রার সস্তান বিদুরের মতো, আসন বটে নীচে, কিন্তু সম্মান স্বয়ং ভীষ্মের চেয়ে কম নয়। আজ দখিন বাতাসে কাব্যলোকের আদরিণী সহকারমঞ্জরীকে আর চিনিয়ে দিতে হবে না। সে আপনাকে তো লুকোতে জানে না। আকাশের হৃদয় সে অধিকার করেছে, মৌমাছির দল বন্দনা করে তার কাছ থেকে অজস্র দক্ষিণা নিয়ে যাচ্ছে। সকলের অাগেই উৎসবের সদাব্রত ও শুরু করে দিয়েছিল, সকলের শেষ পর্যন্ত ওর আমন্ত্রণ রইল গোলা। কোকিল ওর গুণগান দিনে রাতে আর শেষ করতে পারছে না— তোমরাও তান লাগাঁও । ও মঞ্জরী, ও মঞ্জরী, আমের মঞ্জরী দীর্ঘ শূন্ত পথটাকে এতদিন ঠেকেছিল বড়ো কঠিন, বড়ো নিষ্ঠুর। আজ তাকে প্ৰণাম। পথিককে সে তো অবশেষে এনে পৌছিয়ে দিলে। তারই সঙ্গে এনে দিলে অসীম সাগরের বাণী । দুর্গম উঠল সেই পথিকের মধ্যে গান গেয়ে । কিন্তু আনন্দ করতে করতেই চোখে জল আসে-যে। ভুলব কেমন করে যে, যে পথ কাছে নিয়ে আসে সেই পথই দূরে নিয়ে যায়। পথিককে ঘরে আটক করে না। বাধন ছিড়ে