পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ، ق بين জয়সিংহ পা ধুইবার জল লইয়া অগ্রসর হইলেন। রঘুপতি বিরক্তির স্বরে কহিলেন, “থাক থাক, তোমার ও জল রাখিয়া দাও।” বলিয়া পা দিয়া জলের ঘটি ঠেলিয়া ফেলিলেন । জয়সিংহ সহসা এরূপ ব্যবহারের কারণ বুঝিতে না পারিয়া • অবাক হইলেন— কাপড় ভূমি হইতে তুলিয়া যথাস্থানে রাধিতে উদ্যত হইলেন–রঘুপতি পুনশ্চ বিরক্তভাবে কহিলেন, “থাক্ থাক, ও কাপড়ে তোমার হাত দিতে হুইবে না।” বলিয়া নিজে গিয়া কাপড় ছাড়িয়া আসিলেন। জল লইয়া পা ধুইলেন । জয়সিংহ ধীরে ধীরে কহিলেন, “প্ৰভু, আমি কি কোনো অপরাধ করিয়াছি।” রঘুপতি কিঞ্চিং উগ্রস্বরে কহিলেন, “কে বলিতেছে যে তুমি অপরাধ করিয়াছ।” জয়সিংহ ব্যথিত হইয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন । রঘুপতি অস্থিরভাবে কুটিরের দাওয়ায় বেড়াইতে লাগিলেন । এইরূপে রাত্রি অনেক হইল ; ক্রমাগত বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। অবশেষে রঘুপতি জয়সিংহের পিঠে হাত দিয়া কোমলস্বরে কহিলেন, “বংস, শয়ন করিতে যাও, রাত্রি অনেক হইল ।” জয়সিংহ রঘুপতির স্নেহের স্বরে বিচলিত হইয়া কহিলেন, “প্রন্থ আগে শয়ন করিতে যান, তার পরে আমি যাইব ।” রঘুপতি কহিলেন, “আমার বিলম্ব আছে। দেখে পুত্ৰ, তোমার প্রতি আমি অাজ কঠোর ব্যবহার করিয়াছি, কিছু মনে করিয়ো না । আমার মন ভালো ছিল না। সবিশেষ বৃত্তান্ত তোমাকে কাল প্রভাতে বলিব । আজ তুমি শয়ন কর গে।” জয়সিংহ কহিলেন, “যে আজ্ঞে " বলিয়া শয়ন করিতে গেলেন। রঘুপতি সমস্ত রাত বেড়াইতে লাগিলেন । প্রভাতে জয়সিংহ গুরুকে প্রণাম করিয়া দাড়াইলেন। রঘুপতি কহিলেন, “জয়সিং, মায়ের বলি বন্ধ হইয়াছে।” জয়সিংহ বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “সে কী কথা প্রভু।” রঘুপতি। “রাজার এইরূপ আদেশ ।” জয়সিংহ। কোন রাজার ।” রঘুপতি বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “এখানে রাজা আবার কয় গও আছে। মহারাজ গোবিন্দমাণিক্য আদেশ করিয়াছেন, মন্দিরে জীববলি হইতে পারিবে না।” জয়সিংহ। নরবলি ?” -- রঘুপতি। “জা কী উৎপাত। আমি বলিতেছি জীৰবলি, তুমি শুনিজেছ নরবলি ।” ।