8ミbア রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাজের ভারি খেলা পড়িয়া গেল। খেলার সাধ মিটিলে পর ব্রাহ্মণকে স্বজাৱ শিৰিরে লইয়া গেল । স্বজাকে দেখিয়া রঘুপতি সেলাম করিলেন না। তিনি দেবতা ও স্ববর্ণ ছাড়া আর কাহারও কাছে কখনও মাথা নত করেন নাই। মাথা তুলিয়া দাড়াইয়া রছিলেন— হাত তুলিয়া বলিলেন, “শাহেন শার জয় হউক ।” স্বজা মদের পেয়ালা লইয়া সভাসদ সমেত বসিয়াছিলেন ; আলস্তবিজড়িত স্বরে নিতান্ত উপেক্ষাভরে কহিলেন, “কী, ব্যাপার কী ।” সৈন্তেরা কহিল, “জনাব, শক্রপক্ষের চর গোপনে আমাদের বলাবল জানিতে আসিয়াছিল ; আমরা তাহাকে প্রভুর কাছে ধরিয়া আনিয়াছি।” স্বজা কহিলেন, “আচ্ছা আচ্ছা ; বেচারা দেখিতে আসিয়াছে, উহাকে ভালো করিয়া সমস্ত দেখাইয়া ছাড়িয়া দাও । দেশে গিয়া গল্প করিবে ।” রঘুপতি বদ হিন্দুস্থানিতে কহিলেন, “সরকারের অধীনে আমি কর্ম প্রার্থনা করি।” স্বজা আলস্ত ভরে হাত নাড়িয়া তাহাকে দ্রুত চলিয়া যাইতে ইঙ্গিত করিলেন । বলিলেন, “গরম ।” যে বাতাস করিতেছিল, সে দ্বিগুণ জোরে বাতাস করিতে লাগিল । দারা তাহার পুত্র স্থলেমানকে রাজা জয়সিংহের অধীনে মুজার আক্রমণ প্রতিরোধ করিতে পাঠাইয়াছেন। তাহীদের বৃহৎ সৈন্যদল নিকটবর্তী হইয়াছে, সংবাদ আসিয়াছে। তাই বিজয়গড়ের কেল্লা অধিকার করিয়া সেইখানে সৈন্ত সমবেত করিবার জন্ত স্বজা ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন। স্বজার হাতে কেল্লা এবং সরকারী খাজনা সমর্পণ করিবার প্রস্তাব লইয়া বিজয়গড়ের অধিপতি বিক্রমসিংহের নিকট দূত গিয়াছিল। বিক্রমসিংহ সেই দূতমুখে বলিয়া পাঠাইলেন, “আমি কেবল দিল্লীশ্বর শাজাহান এবং জগদীশ্বর ভবানীপতিকে জানি । স্বজা কে, আমি তাহাকে জানি না ।” স্বজা জড়িত স্বরে কহিলেন, “ভারি বেআদব । নাহক আবার লড়াই করিতে হইবে । ভারি হাঙ্গাম।” রঘুপতি এই সমস্ত শুনিতে পাইলেন । সৈন্তদের হাত এড়াইবামাত্র বিজয়গড়ের দিকে চলিয়া গেলেন ।
