পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૭૨ ब्रवैौडल-ब्रछनांबली ত্রয়স্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ বিশ্বন ঠাকুরের বিস্তর কাজ পড়িয়া গেল। তিনি চট্টগ্রামের পার্বত্য প্রদেশে নানা উপহার সমেত দ্রুতগামী দূত পাঠাইয়া দিলেন। সেখানে কুকি-গ্রামপতিদের নিকটে কুকি-সৈন্ত সাহায্য প্রার্থনা করিলেন । যুদ্ধের নাম শুনিয়া তাহারা নাচিয়া উঠিল। কুকিদের যত লাল (গ্রামপতি ) ছিল তাহারা যুদ্ধের সংবাদস্বরূপ লাল বস্ত্রখণ্ডে বাধা দা দূতহস্তে গ্রামে গ্রামে পাঠাইয়া দিল। দেখিতে দেখিতে কুকির স্রোত চট্টগ্রামের শৈলশৃঙ্গ হইতে ত্রিপুরার শৈলশৃঙ্গে আসিয়া পড়িল । তাহাদিগকে কোনো নিয়মের মধ্যে সংযত করিয়া রাখাই দায়। বিশ্বন স্বয়ং ত্রিপুরার গ্রামে গ্রামে গিয়া জুম হইতে বাছিয়া বাছিয়া সাহসী যুবাপুরুষদিগকে সৈন্তশ্রেণীতে সংগ্ৰহ করিয়া আনিলেন । অগ্রসর হইয়া মোগলসৈন্তদিগকে আক্রমণ করা বিৰন ঠাকুর ংগত বিবেচনা করিলেন না । যখন তাহারা সমতলক্ষেত্র অতিক্রম করিয়া অপেক্ষাকৃত দুর্গম শৈলশৃঙ্গে আসিয়া উপস্থিত হইবে, তখন অরণ্য, পর্বত ও নানা দুর্গম গুপ্ত স্থান হইতে তাহাদিগকে সহসা আক্রমণ করিয়া চকিত করিবেন স্থির করিলেন । বড়ো বড়ো শিলাখণ্ডের দ্বারা গোমতী নদীর জল বাধিয়া রাখিলেন— নিতান্ত পরাভবের আশঙ্কা দেখিলে সে-বাধ ভাঙিয়া দিয়া জলপ্লাবনের দ্বারা মোগলসৈন্তদিগকে ভাসাইয়া দেওয়া যাইতে পারিবে । এদিকে নক্ষত্র রায় দেশ লুণ্ঠন করিতে করিতে ত্রিপুরার পার্বত্য প্রদেশে আসিয়া পৌছিলেন। তখন জুম কাটা শেষ হইয়া গেছে। জুমিয়ারা সকলেই দা ও তীয়খন্থ হাতে করিয়া যুদ্ধের জন্ত প্রস্তুত হইয়াছে। কুকিদলকে উচ্ছ্বাসোমুখ জলপ্রপাতের মতো আর বঁাধিয়া রাখা যায় না । গোবিন্দমাণিক্য বলিলেন, “আমি যুদ্ধ করিব না।” বিশ্বন ঠাকুর কহিলেন, “এ কোনো কাজের কথাই নহে ।” রাজা কহিলেন, “আমি রাজত্ব করিবার যোগ্য নহি, তাহারই সকল লক্ষণ প্রকাশ পাইতেছে। সেই জন্ত আমার প্রতি প্রজাদের বিশ্বাস নাই, সেই জন্যই ছর্তিক্ষের স্বচন, সেই জন্তই এই যুদ্ধ। রাজ্য-পরিত্যাগের গুপ্ত এ সকল ভগবানের আদেশ " বিৰন কছিলেন, “এ কখনোই ভগবানের আদেশ নহে। ঈশ্বর তোমার উপরে রাজ্যভার অর্পণ করিয়াছেন ; যত দিন রাজকাৰ্ধ নিঃসংকট ছিল তত দিন তোমার সহজ কর্তব্য অনায়াসে পালন করিয়াছ, যখনই রাজ্যভার গুরুতর হইয়া উঠিয়াছে