পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* { * \ 8brö- রবীন্দ্র-রচনাবলী নৈরাপ্ত জল্পিত না। একটিমাত্র মঙ্গলের চিহ্ন দেখিলেই তাহার আশা সহস্ৰ অমঙ্গল ভেদ করিয়া স্বৰ্গাভিমুখে প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিত। আমাদের সকলের জীবনেই কি কোনো-না-কোনো দিন এমন এক অভূতপূর্ব নূতন প্রেম ও নূতন স্বাধীনতার প্রভাত উদিত হয় নাই, যে-দিন সহসা এই হাস্যক্রনীনময় জগৎকে এক কোমল নবকুমারের মতো এক অপূর্ব সৌন্দর্ধ প্রেম ও মঙ্গলের ক্রোড়ে বিকশিত দেখিয়াছি—ষে-দিন কেহ আমাদিগকে ক্ষুব্ধ করিতে পারে না, কেহ আমাদিগকে জগতের কোনো স্থখ হইতে বঞ্চিত করিতে পারে না, কেহ আমাদিগকে কোনো প্রাচীরের মধ্যে রুদ্ধ করিয়া রাখিতে পারে না—যে-দিন এক অপূর্ব বাশি বাজিয়া উঠে, এক অপূর্ব বসন্ত জাগিয়া উঠে, চরাচর চিরযৌবনের আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া যায়—ষে-দিন সমস্ত দুঃখ-দারিদ্র্যবিপদকে কিছুই মনে হয় না। নূতন স্বাধীনতার আনন্দে প্রসারিতহদয় গোবিন্দমাণিক্যের জীবনে সেই দিন উপস্থিত হইয়াছে । দক্ষিণ চট্টগ্রামের রামু শহর এখনো দশ ক্রোশ দূরে ৷ সন্ধ্যার কিঞ্চিৎ পূর্বে গোবিন্দমাণিক্য যখন আলমখাল নামক ক্ষুদ্র গ্রামে গিয়া পৌছিলেন, তখন গ্রামপ্রান্তবর্তী একটি কুটির হইতে ক্ষীণকণ্ঠ বালকের ক্ৰন্দনধ্বনি শুনিতে পাইলেন । গোবিন্দমাণিক্যের হৃদয় সহসা অত্যন্ত চঞ্চল হইয়া উঠিল । তিনি তৎক্ষণাৎ সেই কুটিরে গিয়া উপস্থিত হইলেন—দেখিলেন, যুবক কুটির স্বামী একটি শীর্ণ বালককে কোলে করিয়া লইয়া ঘরের মধ্যে পায়চারি করিতেছে। বালক থরথর করিয়া কঁাপিতেছে এবং থাকিয়া থাকিয়া ক্ষীণ কণ্ঠে কাদিতেছে । কুটিরম্বামী তাহাকে বুকের মধ্যে চাপিয়া ধরিয়া ঘুম পাড়াইবার চেষ্টা করিতেছে। সন্ন্যাসবেশী গোবিন্দমাণিক্যকে দেখিয়া সে শশব্যস্ত হইয়া পড়িল । কাতর স্বরে কহিল, "ঠাকুর, ইহাকে আশীৰ্বাদ করো।” গোবিন্দমাণিক্য আপনার কম্বল বাহির করিয়া কম্পমান বালকের চারি দিকে জড়াইয়া দিলেন । বালক এক বার কেবল তাহার শীর্ণ মুখ তুলিয়া গোবিন্দমাণিক্যের দিকে চাহিল। তাহার চোখের নিচে কালি পড়িয়াছে—তাহার ক্ষীণ মুখের মধ্যে দুখানি চোখ ছাড়া আর কিছুই নাই যেন । এক বার গোবিন্দমাণিক্যকে দেখিয়াই দুইখানি পাণ্ডুবর্ণ পাতলা ঠোট নাড়িয়া ক্ষীণ অব্যক্ত শৰ করিল। আবার তখনি তাহার পিতার স্বন্ধের উপর মুখ রাখিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া রহিল। তাহার পিতা তাহাকে কম্বল সমেত ভূমিতে রাখিয়া রাজাকে প্ৰণাম করিল এবং রাজার পদধূলি লইয়া ছেলের গায়ে মাথায় দিল । রাজা ছেলেকে তুলিয়া লইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "ছেলেটির বাপের নাম কী।” কুটির স্বামী কছিল, “আমি ইহার বাপ, আমার নাম যাদব । ভগবান একে একে আমার সকল ক-টিকে