পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

458 রবীন্দ্র-রচনাবলী জন্য প্রাণ দিতাম–কিন্তু যুরোপীয়েরা কেবলমাত্র একটা ভাবের জন্য একটা জ্ঞানের জগু মরিতে পারে। তাহারা আফ্রিকার মরুভূমিতে, মেরুপ্রদেশের তুষারগর্তে প্রাণ বিসর্জন করিয়া আসিতেছে। কাহার জন্ত । কোনো মানুষের জন্য নহে। বৃহৎ ভাবের জন্ত, জ্ঞানের জন্ত, বিজ্ঞানের জন্ত । অতএব দেখা যাইতেছে য়ুরোপ মানুষের ভক্তি অনুরাগ জ্ঞানে ও ভাবে বিস্তৃত হইতেছে স্বতরাং ব্যক্তিবিশেষের ভাগে কিছু কিছু কম পড়িতেছে। সেই যুরোপীয় শিক্ষার প্রভাবে ব্যক্তিবিশেষের চারি দিক হইতে আমাদের শিকড়ের পাক প্রতিদিন যেন অল্পে অল্পে খুলিয়া আসিতেছে। এখন মতের অনুরোধে অনেকে পিতামাতাকে ত্যাগ করিতেছেন, এখন প্রত্যক্ষ বাস্তভিটাটুকু ছাড়িয়া অপ্রত্যক্ষ স্বদেশের প্রতি অনেকের প্রেম প্রসারিত হইতেছে, এবং স্থদুর উদ্দেশুের জন্য অনেকে জীবনযাপন করিতে অগ্রসর হইতেছেন। এরূপ ভাব যে সম্পূর্ণ স্ফর্তি পাইয়াছে তাহা নহে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ইহার কাজ চলিতেছে, ইহার নানা লক্ষণ অল্পে অল্পে প্রকাশ পাইতেছে। ইহার ভালোমন দুইই আছে। সে কথা সকল অবস্থা সম্বন্ধেই থাটে । তবে, যখন এই পরিবতন একেবারে ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছে, তখন ইহার মধ্যে যে ভালোটুকু আছে সেটা যদি খুজিয়া বাহির করিতে পারি, সেই ভালোটুকুর উপর যদি অনুরাগ বদ্ধ করিতে পারি, তবে সেই ভালোটুকু শীঘ্র শীঘ্ৰ ক্ষর্তি পাইয়া বাড়িয়া উঠিতে পারে, মনটা মান হইয়া যায়। নহিলে, সকল জিনিসের যেমন দস্তুর আছে, মন্দটাই আগেভাগে খুব কণ্টকিত হইয়া সকলের চোখে পড়ে, ভালোটা অনেক বিলম্বে গা-কাড়া দিয়া উঠে । আমার কথা তো আমি বলিলাম এখন তোমার কথা তুমি বলে। তুমি কলেজে পড় নাই বলিয়া কিছুমাত্র সংকোচ করিয়ো না । কারণ তোমারও লেখাতে কালেজের বিলক্ষণ গন্ধ ছাড়ে । সেটা সময়ের প্রভাব। প্ৰাণে অধভোজন হয় সেটা মিথ্যা কৰা নয়। অতএব এখনকার সমাজে বসিয়া তুমি যে নিশ্বাস লইতেছ ও নন্ত লইতেছ, তাহাতেই কালেজের অর্ধেক বিষ্ঠা তোমার নাকে সে ধোইতেছে। নাক বন্ধ করিতে পারিতেছ না, কেবল নাক তুলিয়াই আছ যেন পেয়াজ-রস্থনের ক্ষেতের মধ্যে বাস করিতেছ এবং তোমার নাতিরাই তাহার এক-একটি হৃষ্টপুষ্ট উৎপন্ন ফ্রব্য। কিন্তু ইহা জানিয়ে এ গন্ধ ধুইলে যাইবে না মাজিলে যাইবে না, নাতিগুলোকে একেবারে সমূলে উৎপাটন করিতে পার তো যায়। কিন্তু এ তো আর তোমার পাক চুল নয়, এ রক্তবীজের বাড়। সেবক ঐনৰীলকিশোর শর্মণঃ