পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়েছে। ‘আবেদন’ কবিতায় ঠিক তার উলটাে কথা । কবি বলেছে, ‘কর্মক্ষেত্রে, যেখানে কার্যক্ষেত্রের জনতায় কর্মীরা কম করছে, সেখানে আমার স্থান নয় । আমার স্থান সৌন্দর্যের সাধকরূপে একা তোমার কাছে ” জীবনের দুই ভিন্ন মহলে কবির এই ভিন্ন ভিন্ন কথা । জগতে বিচিত্ররূপিণী আর অন্তরে একাকিনী কবির কাছে এ দুইই সত্য, আকাশ এবং ভূতলকে নিয়ে ধরণী যেমন সত্য । ‘ব্রাহ্মণ’ ‘পুরাতন ভূত্য’, ‘দুই বিঘা জমি এইগুলির কাব্যাকাকলি নীড়ের বাসার ; “স্বৰ্গ হইতে বিদায়”। এখানে সুর নেমেছে উর্ধবলোক থেকে মর্তের পথে ; ‘প্রেমের অভিষেক’-এর প্রথম যে পাঠ লিখেছিলাম তাতে কেরানি-জীবনের বাস্তবতার ধূলিমাখা ছবি ছিল অকুষ্ঠিত কলমে আঁকা, পালিত অত্যন্ত ধিককার দেওয়াতে সেটা তুলে দিয়েছিলুম ; “ যেতে নাহি দিব” কবিতায় বাঙালিঘরের ঘরকন্নার যে আভাস আছে তার প্রতিও লোকেন কটাক্ষ বর্ষণ করেছিল, ভাগ্যক্রমে তাতে বিচলিত হই নি, হয়তো দু-চারটে লাইন বাদ পড়েছে । লোকজীবনের ব্যবহারিক বাণীকে উপেক্ষা করে আমার কাব্যে আমি কেবল আনন্দ মঙ্গল এবং ঔপনিষদিক মোহ বিস্তার করে তার বাস্তব সংসর্গের মূল্য লাঘব করেছি। এমন অপবাদ কেউ কেউ আমাকে দিয়েছে । আমার কাব্য সমগ্রভাবে আলোচনা করে দেখলে হয়তো তারা দেখবেন। আমার প্রতি অবিচার করেছেন । আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত আমি এই বাণীর পস্থাতেই আমার পদ্য ও গদ্য রচনাকে চালনা করেছি— জগতের মাঝে কত বিচিত্ৰ তুমি হে তুমি বিচিত্ররূপিণী । Зske Sveo 8 а