পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SO S রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ফেলি। আবরণ, ত্যজিয়া শয়ন, বিরলবসন বেশে দুরু দুরু বুকে খুলিয়া দুয়ার বাহিরে দাড়ানু এসে । দূর নদীপারে শূন্য শ্মশানে শৃগাল উঠিল ডাকি, মাথার উপরে কেঁদে উড়ে গেল কোন নিশাচর পাখি। দেখিানু দুয়ারে রমণী,মুরতি অবগুণ্ঠনে ঢাকাকৃষ্ণ অশ্বে বসিয়া রয়েছে, চিত্ৰে যেন সে আঁকা। ধূম্রবরন, যেন দেহ তার গঠিত শ্মশানধূমে। নড়িল না কিছু, আমারে কেবল হেরিল আঁখির পাশে— পাণ্ডু আকাশে খণ্ড চন্দ্ৰ হিমানীর গ্লানি –মাখা, পল্লবহীন বৃদ্ধ অশথ শিহরে নগ্ন শাখা। নীরব রমণী অঙ্গুলি তুলি দিল ইঙ্গিত করি— মস্ত্ৰমুগ্ধ অচেতনসম চড়িানু অশ্ব-’পরি। বিদ্যুৎবেগে ছুটে যায় ঘোড়া— বারেক চাহিনু পিছে, ঘরদ্বার মোর বাস্পসমান মনে হল সব মিছে । কাতর রোদন জাগিয়া উঠিল। সকল হৃদয় ব্যেপে, কণ্ঠের কাছে সুকঠিন বলে কে তারে ধরিল চেপে । পথের দুধারে রুদ্ধদুয়ারে দাড়ায়ে সৌধসারি, ঘরে ঘরে হায় সুখশয্যায় ঘুমাইছে নরনারী। নির্জন পথ চিত্ৰিতবৎ, সাড়া নাই। সারা দেশে— রাজার দুয়ারে দুইটি প্রহরী ঢুলিছে নিদ্রাবেশে । শুধু থেকে থেকে ডাকিছে কুকুর সুদূর পথের মাঝে—— গভীর স্বরে প্রাসাদশিখরে প্রহরঘণ্টা বাজে । অফুরান পথ, অফুরান রাতি, অজানা নুতন ঠাই— অপরূপ এক স্বপ্নসমান, অর্থ কিছুই নাই। কী যে দেখেছিনু মনে নাহি পড়ে, ছিল নাকো আগাগোড়া—- লক্ষ্যবিহীন তীরের মতন ছুটিয়া চলেছে ঘোড়া । চরণে তাদের শব্দ বাজে না, উড়ে নাকো ধূলিরেখা— কঠিন ভূতল নাই যেন কোথা, সকলি বাম্পে লেখা। মাঝে মাঝে যেন চেনা-চেনা-মাতো মনে হয় থেকে থেকে নিমেষ ফেলিতে দেখিতে না পাই কোথা পথ যায় বেঁকে । ভালো করে যেই দেখিবারে যাই মনে হল কিছু নয় । দুই ধারে এ কি প্রাসাদের সারি ? অথবা তরুর মূল ? অথবা এ শুধু আকাশ জুড়িয়া আমারই মনের ভুল ? মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি রমণীর অবগুষ্ঠিত মুখে— নীরব নিদয় বসিয়া রয়েছে, প্ৰাণ কেঁপে ওঠে। বুকে ।