পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sSAf ভয়ে ভুলে যাই দেবতার নাম, মুখে কথা নাহি ফুটে ; হুহু রবে বায়ু বাজে দুই কানে ঘোড়া চলে যায় ছুটে । চন্দ্ৰ যখন অস্তে নামিল তখনো রয়েছে রাতি, পূর্ব দিকের অলস নয়নে মেলিছে রক্ত ভাতি । জনহীন এক সিন্ধুপুলিনে অশ্ব থামিল আসি— সমুখে দাড়ায়ে কৃষ্ণ শৈল গুহাম্মুখ পরকাশি। সাগরে না শুনি জলকলরব, না। গাহে উষার পাখি, বহিল না মৃদু প্ৰভাতপবন বনের গন্ধ মাখি । অশ্ব হইতে নামিল রমণী, আমিও নামিনু নীচে, আঁধার-ব্যাদান গুহার মাঝারে চলিনু তাহার পিছে। ভিতরে খোদিত উদার প্রাসাদ শিলাস্তম্ভ—’পারে, কনকশিকলে সোনার প্রদীপ দুলিতেছে, থরে থরে । অপরূপ পাখি, অপরাপ নারী, লতাপাতা নানা—মতো । মাঝখানে আছে চাদোয়া খাটানো, মুক্ত কালরে গাথা— তারি তলে মণিপালঙ্ক-"পারে অমল শয়ন পাতা । তারি দুই ধারে ধুপাধার হতে উঠিছে গন্ধধূপ, সিংহবাহিনী নারীর প্রতিমা দুই পাশে অপরূপ। নাহি কোনো লোক, নাহিকো প্রহরী, নাহি হেরি দাসদাসী । গুহাগহতলে তিলেক শব্দ হয়ে উঠে। রাশি রাশি । নীরবে রমণী আবৃত বদনে বসিলা শয্যা—”পরে, অঙ্গুলি তুলি ইঙ্গিত করি পাশে বসাইল মোরে। হিম হয়ে এল সর্বশরীর, শিহরি উঠিলা প্ৰাণশোণিতপ্ৰবাহে ধবনিতে লাগিল ভয়ের ভীষণ তান । সহসা বাজিয়া বাজিয়া উঠিল দশ দিকে বীণা-বেণু, মাথার উপরে ঝরিয়া ঝরিয়া পড়িল পুষ্পপরেণু। দ্বিগুণ আভায় জ্বলিয়া উঠিল। দীপের আলোকরাশিঘোমটা-ভিতরে হাসিল রমণী মধুর উচ্চহাসি । সে হাসি ধ্বনিয়া ধবনিয়া উঠিল বিজন বিপুল ঘরে— শুনিয়া চমকি ব্যাকুল হৃদয়ে কহিলাম জোড় করে, “আমি যে বিদেশী অতিথি, আমায় ব্যথিয়ো না পরিহাসে, কে তুমি নিদয় নীরব ললনা, কোথায় আনিলে দাসে।” অমনি রমণী কনকদণ্ড আঘাত করিল ভূমে, আঁধার হইয়া গেল সে ভবন রাশি রাশি ধুপ ধুমে। বাজিয়া উঠিল শতেক শঙ্খ হুলুকলরব-সাথেপ্ৰবেশ করিল বৃদ্ধ বিপ্ৰ ধান্যদূর্বা হাতে । পশ্চাতে তার বঁাধি দুই সার কিরাতনারীর দল কেহ বহে মালা, কেহ বা চামর, কেহ বা তীৰ্থজল । SOVO