পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 28 ܓ নিমাই। ঠাকরুন, পালকি তো আসে নি। এখন কী আজ্ঞা করেন। ইন্দুমতী। এখন তুমি তোমার কাজে যেতে পারো। না না, ঐ যে তোমার মনিব এদিকে আসছেন। ওঁকে আমার সম্বন্ধে খবর দেবার কোনাে দরকার নেই, আমার পালকি নিশ্চয়ই এসেছে। =哈 [প্ৰস্থান নিমাই। কী চমৎকার রূপ ! আর কী উপস্থিত বুদ্ধি! চোখে মুখে কেমন উজ্জল জীবন্ত ভাব! বা, বা! আমাকে হঠাৎ চাকর বানিয়ে দিয়ে গেল— সেও আমার পরম ভাগ্যি ! বাঙালির ছেলে চাকরি করতেই জন্মেছি কিন্তু এমন মনিব কি অদৃষ্টে জুটবো! পুরুষের কাপড়ও যেমন মানিয়েছিল ঐটুকু নির্লজতাও ওকে কেমন বেশ শোভা পেয়েছিল। আহা, এই শামলা আর এই চাপকন চন্দরকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না। বাগবাজারের চৌধুরী ! সন্ধান নিতে হচ্ছে। চন্দ্ৰকাস্তের প্রবেশ চন্দ্ৰকান্ত। তুমি এ ঘরে ছিলে না কি। তবে তো দেখেছি ? নিমাই। চক্ষু থাকলেই দেখতে হয়- কিন্তু কে বলো দেখি। চন্দ্ৰকান্ত। বাগবাজারের চৌধুরীদের মেয়ে কাদম্বিনী। আমার স্ত্রীর একটি বন্ধু। নিমাই । ওর স্বামী বোধ করি স্বাধীনতাওয়ালা ? চন্দ্ৰকান্ত । ওঁর আবার স্বামী কোথায় । নিমাই। মরেছে বুঝি ? আপদ গেছে। কিন্তু বিধবার মতো বেশ নয় তো— চন্দ্ৰকান্ত। বিধবা নয় হে— কুমারী। যদি হঠাৎ স্নায়ুর ব্যামো ঘটে থাকে তো বলো, ঘটকালি করি। নিমাই। তেমন স্নায়ু হলে এতদিনে গলায় দড়ি দিয়ে মরতুম। চন্দ্ৰকান্ত । তা হলে চলো একবার বিনোদকে দেখে আসা যাক । তার বিশ্বাস সে ভারি একটা অসমসাহসিক কাজ করতে প্ৰবৃত্ত হয়েছে, তাই একেবারে সপ্তমে চড়ে রয়েছে- যেন তার পূর্বে বঙ্গদেশে বিবাহ আর কেউ করে নি! নিমাই ! মেয়েমানুষকে বিয়ে করতে হবে তার আবার ভয় কিসের। এমন যদি হত, না দেখে বিয়ে কবতে গিয়ে দৈবাৎ একটা পুরুষমানুষ বেরিয়ে পড়ত তা হলে বটে ! চন্দ্ৰকান্ত । বল কী নিমাই ! বিধাতার আশীর্বাদে জন্মালুম পুরুষমানুষ হয়ে, কী জানি কার শাপে বিয়ে করতে গেলুম মেয়েমানুষকে, এ কি কম সাহসের কথা । চন্দ্ৰকান্ত । আরে, আরে, এসো নলিনীদা । ভালো তো ? নলিনাক্ষ । (নিমাইয়ের প্রতি) বিনোদ কোথায় । চন্দ্ৰকান্ত। বিনোদ যেখানেই থাক, আপাতত আমার মতো এতবড়ো লোকটা কি তোমার নলিনাক্ষগোচর হচ্ছে না। তোমার ভাব দেখে হঠাৎ ভয় হয়, তবে আমি হয়তো বা নেই। নলিনাক্ষ। আমি বিনোদকে খুঁজছি। চন্দ্ৰকান্ত ৷ ইচ্ছা করলে আমনি ইতিমধ্যে আমার সঙ্গেও দুটাে-একটা কথা কয়ে নিতে পারে: { তা চলো, আমরাও তার কাছে যাচ্ছি । নলিনাক্ষ । তা হলে তোমরা এগোও । আমি পরে যাব এখন। { প্ৰস্থান