পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ ܢ ܓ চন্দ্ৰকান্ত। বিনোদের বিয়েটা তো বছরের মধ্যে সদাসর্বদা হবে না। নিমাই। যা হবার আজই চুকে যাবে। অতএব আজ তোমাকে ছাড়িছি নে, চলো । নিমাই।। চলো । [প্ৰস্থান দ্বিতীয় দৃশ্য চন্দ্রকান্তের অন্তঃপুর ক্ষান্তমণি ও ইন্দুমতী ক্ষান্তমণি । তোমাদের বাড়ির আয়োজন সব হল ? ইন্দুমতী । ইহা ভাই, একরকম হল। এখন তোমাদের বাড়ি কী হচ্ছে তাই দেখতে এসেছি। আমি বরের ঘরেও আছি, কনের ঘরেও আছি। বর তো তোমাদের এখান থেকে বেরোবেন ? তার তিন কুলে আর কেউ নেই না কি । ক্ষান্তমণি। ঐ তো ভাই, ওদের কথা বুঝবে কে। বাপ-মা নেই বটে, কিন্তু শুনেছি দেশে পিসি-মাসি সব আছে— কিন্তু তাদের খবরও দেয় নি। বলে যে, বিয়ে করছি, হাট বসাচ্ছি নে তো ! ওঁকে বললুম, তুমি তাদের খবর দাও— উনি বলেন তাতে খরচপত্র বিস্তর বেড়ে যাবে।— বিয়ে করতেই যদি বেবাক খরচ হয়ে যায় তো ঘরকন্না করতে বাকি থাকবে কী— শুনেছ একবার কথা ! আবার বলে কী— এ! তো আর শুম্ভনিশুম্ভর যুদ্ধ হচ্ছে না, কেবল দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে, এর জন্যে এত শোরসরাবৎ লোকলস্করের দরকার কী ? ইন্দুমতী । কিছু ধুমধাম নেই, আমার ভাই এ মন উঠছে না। আমাদের হাতে একবার পড়লে তাকে আচ্ছা করে শিক্ষা দিতে হবে—দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে যে কতবড়ো ব্যাপার তা তাকে একরকম মোটামুটি বুঝিয়ে দেব। — আজি যে তুমি বাইরের ঘরে ? ক্ষান্তমণি। এই ঘরে সব বরযাত্রী জুটবে। দেখ-না ভাই ঘরের অবস্থখানা। তারা আসবার আগে একটুখানি গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি। ইন্দুমতী। তোমার একলার কর্ম নয়, এসো ভাই দুজনে এ জঞ্জাল সাফ করা যাক। এগুলো দরকারি নাকি ? ক্ষান্তমণি। কিছু না। যত রাজ্যির পুরোনো খবরের কাগজ জমেছে। কাগজগুলো যেখানে পড়া হয়ে যায় সেইখানেই পড়ে থাকে। ওগুলো যে ফেলে দেওয়া কি গুছিয়ে রাখা তার নাম নেই। ইন্দুমতী। তবে ঐসঙ্গে এগুলোও ফেলে দিই ? ক্ষান্তমণি। না না, ওগুলো ওঁর মকদ্দমার কাগজ— হারাতে পারলে বাচেন বোধ হয়, মক্কেলদের হাত থেকে উদ্ধার পান। কেন যে হারায় না। তাও তো বুঝতে পারি নে। কতকগুলো গদির নীচে গোজা, কতক আলমারির মাথায়, কতক ময়লা চপকানের পকেটে, যখন কোনোটার দরকার পড়ে বাড়ি মাথায় করে বেড়ােন— আস্তাকুড় থেকে আর বাড়ির ছাত পর্যন্ত এমন জায়গা নেই। যেখানে না। খুঁজতে হয়। ইন্দুমতী। এর সঙ্গে যে ইংরেজি নভেলও আছে—তারও আবার পাতা ছেড়া। কতকগুলো চিঠি— এ! কি দরকারি। ক্ষান্তমণি। ওর মধ্যে দরকারি আছে অদরকারিও আছে, কিছু বলবার জো নেই। খুব গোপনীয়ও আছে, সেগুলো চার দিকে ছড়ানো। খুব বেশি দরকারি চিঠি সাবধান করে রাখবার জন্যে বইয়ের মধ্যে গুজে রাখা হয়, সে আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না, ভুলেও যেতে হয়। বন্ধুরা বই পড়তে