পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳ Ն রবীন্দ্র-রচনাবলী নিমাই। সেইজন্য তো ভাই, গোড়ায় একবার দেখে শুনে নেওয়া উচিত ছিল। তা এখন কী করবে বলো দেখি । চন্দ্ৰকান্ত। আমি তো আর তার মুখদর্শন করছি নে। এই নিয়ে তার সঙ্গে আমার ভারি ঝগড়া হয়ে গেছে। নিমাই। তুমি তাকে ছাড়লে সে যে নেহাত অধঃপাতে যাবে। চন্দ্ৰকান্ত। না, তার সঙ্গে আমি কিছুতেই মিশছি নে, সে যদি আমার পায়ে ধরে এসে পড়ে। তবু না! তুমি ঠিক বলেছিলে নিমাই, আজকাল সবাই যাকে ভালোবাসা বলে সেটা একটা স্নায়ুর ব্যামো— হঠাৎ কাপুনি দিয়ে ধরে, আবার হঠাৎ ঘাম দিয়ে ছেড়ে যায়। নিমাই। সে-সব বিজ্ঞানশাস্ত্রের কথা পরে হবে, আপাতত আমার একটা কাজ করে দিতে হচ্ছে। চন্দ্ৰকান্ত। যে কাজ বল তাতেই রাজি আছি কিন্তু ঘটকালি আর করছি নে। নিমাই। ঐ ঘটকালিই করতে হবে। চন্দ্ৰকান্ত । ( ব্যগ্ৰভাবে ) কী রকম শুনি । নিমাই। বাগবাজারের চৌধুরীদের বাড়ির কাদম্বিনী, তার সঙ্গে আমার— চন্দ্ৰকান্ত । ( উচ্চস্বরে ) নিমাই, তোমারও কবিত্ব ! তবে তোমারও স্নায়ু বলে একটা বালাই আছে ! নিমাই। তা আছে ভাই। বোধ হয় একটু বেশি পরিমাণেই আছে। অবস্থা এমনি হয়েছে কিছুতেই একজামিনের পড়ায় মন দিতে পারি নে— শিগগির আমার একটি সদগতি না করলে— চন্দ্ৰকান্ত। বুঝেছি। কিন্তু নিমাই, আমার ঘাড়ে পাপের বোঝা আর চাপাস নে। ভেবে দেখ, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে দুটি অবলার সর্বনাশ করেছি— একটিকে স্বহস্তে নিয়েছি, আর-একটিকে প্রিয় বন্ধুর হাতে সমর্পণ করেছি।-— আর স্ত্রীহত্যার পাতকে আমাকে লিপ্ত করিস নে। নিমাই। কিছু ভেব না ভাই। এবার যা করবে তাতে তোমার পূর্বকৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে। চন্দ্ৰকান্ত। ভ্যােলা মোর দাদা ! এ বেশ কথা বলেছিস ভাই। সকাল থেকে মরে ছিলুম। এখন একটু প্ৰাণ পাওয়া গেল। আমি একখানি যাচ্ছি। চাদরখানা নিয়ে আসি। আমনি বড়োবউয়ের পরামর্শটাও জানা ভালো । 2 fri l ( অনতিবিলম্বে ছুটিয়া আসিয়া ) বড়োবউ রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে । এ-সমস্তই কেবল তোদের জন্যে । না, আমি আর তোদের কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখছি নে | তোরা পাচজনে এসে জুটিস, আমিও ছেলেমানুষদের সঙ্গে মিশে যা মুখে আসে তাই বাকি, আর এই-সমস্ত অনৰ্থ বাধে । আমার চিরকালের ঘরের স্ত্রটিকেই যদি ঘরে না রাখতে পারব তো তোদের স্ত্রী জুটিয়ে দিয়ে আমার কী এমন পরমার্থ লাভ হবে বল দেখি । না, তোদের কারও সঙ্গে আমি আর বাক্যালাপ করছি নে । বিনোদবিহারী ও নলিনাক্ষের প্রবেশ বিনোদবিহারী। চন্দরদী, তুমি আমার উপর রাগ করে চলে এলে ভাই, আমি আর থাকতে পারলুম না। টুকু? না ভাই, তােদের উপর কি আমি রাগ করতে পারি। তবে মনে একটু দুঃখ হয়েছিল তা বিনোদবিহারী। কী করব চন্দারদা। আমি এত চেষ্টা করছি কিছুতেই পেরে উঠছি নে চন্দ্ৰকান্ত। কেন বল দেখি । ওর মধ্যে শক্তটা কী। মেয়েমানুষকে ভালোবাসতে পারিস নে ? তুই কি কাঠের পুতুল।