পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের খাতা WDGS ঈশান। নাঃ, ওঁর আর উঠে কাজ নেই! তামাম রাত ধরে তোমার ঐ লেখা শুনুন ! (কেদারের প্ৰতি) যাও বাবু, তুমি ঘরে যাও। আমাদের বাবুকে আর খেপিয়ে তুলো না। [প্ৰস্থান কেদার। ইনি আপনার কে হন ? বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, আমার চাকর। কেদার। ওঃ, ওর নাম কী, ঐর কথাগুলি বেশ পষ্ট পষ্ট। বৈকুণ্ঠ। হা হা হা হা! ঠিক বলেছেন। তা, কিছু মনে করবেন না— অনেক দিন থেকে আছে- আমাকে মানে টানে না। কেদার। ওর নাম কী, অল্পক্ষণের আলাপ যদিচ, তবু আমাকেও বড়ো মানে না দেখলুম। কিন্তু ওর কথাটা আপনি কানে তোলেন নি- খাবার এসেছে। বৈকুণ্ঠ। তা হােক, রাত হয় নি— এই অধ্যায়টা শেষ করে ফেলি। কেদার। বৈকুণ্ঠবাবু, খাবার আপনার ঘরে আসে এবং এসে বসেও থাকে- ওর নাম কী, আমাদের ঘরে তার ব্যবহার অন্য রকমের। দেখুন, যখন ছেলেবেলায় কলেজে পড়তুমি তখন, ওর নাম কী, খুব উচ্চ মাচার উপরেই আশালতা চড়িয়েছিলুম; তাতে বড়ো বড়ো লাউয়ের মতো দেড়-হাত দু-হাত ফলও ঝুলে পড়েছিল, কিন্তু কী বলে, গোড়ায় জল পেলে না, ভিতরে রস প্রবেশ করলে না, ওর নাম কী, সব ফাপা হয়ে রইল। এখন কোথায় পয়সা, কোথায় অন্ন, এই করেই মরছি। ভিতরে সার যা ছিল সব চুপসে, ওর নাম কী, শুকিয়ে গেল। বৈকুণ্ঠ। আহা হা হা! এতবড়ো দুঃখের বিষয় আর কিছু হতে পারে না। অথচ সর্বদাই প্ৰফুল্ল আছেন— আপনি মহানুভব ব্যক্তি! ( কেদারের হাত চাপিয়া ধরিয়া) দেখুন, আমার ক্ষুদ্র শক্তিতে যদি আপনার কোনো সাহায্য করতে পারি খুলে বলবেন— কিছুমাত্র সংকোচ— কেদার। মাপ করবেন বৈকুণ্ঠবাবু, ওর নাম কী, আমাকে টাকার প্রত্যাশী মনে করবেন। না— আজি যে আনন্দ দিয়েছেন। এর তুলনায়, ওর নাম কী, টাকার তোড়া তিনকড়ি। ( জনাস্তিকে ) খুশি হয়ে দিতে চাচ্ছে, নে না— কেদার। সব মাটি করলে লক্ষ্মীছাড়া বান্দর কোথাকারবৈকুণ্ঠ। এ ছেলেটি কে ? কেদার। দেনার সঙ্গে যেমন সুদ, ওর নাম কী, উনি আমার তেমনি নিজের দায়ই সামলাতে পারি নে, তার উপর আবার ভগবান, কী বলে, ঢাকের উপর টেকি চড়িয়েছেন। তিনকড়ি। উনি যদি হন গোরু আমি হই ওঁর লেজ। যখন চরে খান আমি পিঠের মাছি তাড়াই, আবার যখন চাষার হাতে লাঞ্ছনা খেতে হয় তখন মলাটা আমার উপর দিয়েই যায়। বৈকুণ্ঠ। হা হা হা হাঃ ! এ ছােকরাটি বেড়ে পেয়েছেন। এর যে খুব চােখেমুখে কথা। দেখুন, বিলম্ব হয়ে গেছে, আজ আমার এইখানেই আহারাদি হােক-না। কেদার। না না, সে আপনার অসুবিধা করে কােজ নেই। তিনকড়ি। বিলক্ষণ!! শুভকার্যে বাধা দিতে নেই। খাওয়াতে ওঁর সামান্য অসুবিধে, না খেতে পেলে আমাদের অসুবিধে ঢের বেশি। খিদে পেয়েছে মশায়। বৈকুণ্ঠ। বেশ বাবা, তুমি পেট ভরে খেয়ে যাও। তৃপ্তির সঙ্গে খেতে দেখলে আমার বড়ো আনন্দ হয়। কেদার। এই ছোড়াটাকে ভগবান, ওর নাম কী, অন্তরিান্দ্ৰিয়ের মধ্যে কেবল একটি জঠর দিয়েছেন মাত্র। আপনার এই আশ্রমটিতে এলে পেট বলে যে একটা গভীর গহবর আছে, কী বলে, সে কথা একেবারে ভুলে যেতে হয়। মনে হয় যেন কেবল একজোড়া হৃৎপিণ্ডের উপরে, ওর নাম কী, একখানি মুণ্ডু নিয়ে বসে আছি।