পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের খাতা । ᏔlᏩ Ꮹ: অবিনাশ। কী দাদা, খাবার ঠাণ্ডা হয়ে এল, এখনো লেখা নিয়ে বসে আছ! বৈকুণ্ঠ। না, না, লেখাটেখা কিছু নয়, কেদারবাবুর সঙ্গে গল্প করছি। অবিনাশ। তাই তো, কেদার দেখছি!! কী সর্বনাশ! তুমি কোথা থেকে হে। দাদাকে পেয়ে বসেছ বুঝি। কেদার। হা হা হা হাঃ! অবিনাশ, চিরকালই তুমি ছেলেমানুষ রয়ে গেলে হে। অবিনাশ । দাদা, তোমার লেখা শোনাবার আর লোক পেলে না ? শেষকালে কেদারকে ধরেছ ? ও যে তোমাকে ধরলে আর ছাড়বে না। বৈকুণ্ঠ। আঃ অবিনাশ, ছিঃ, কী বকছ ? কেদার। বৈকুণ্ঠবাবু, আপনি ব্যস্ত হবেন না, ওর নাম কী, অবিনাশের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়েছি, আমার সঙ্গে দেখা হলেই ওর আর ঠাট্টা ছাড়া কথা নেই। অবিনাশ। তোমার ঠাট্টা যে আমার ঠাট্টার চেয়ে গুরুতর। এই সেদিন আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেলে, আবার বুঝি দরকার পড়েছে তাই দাদার বই শুনতে এসেছ ? কেদার। ভাই অবিনাশ, ওর নাম কী, এক-একসময় তোমার কথা শুনে হঠাৎ ভ্রম হয় যে, যা বলছ বুঝি বা সত্যই বলছি!! কী জানি, বৈকুণ্ঠবাবু মনে ভাবতেও পারেন যে, কী বলে ভালো— বৈকুণ্ঠ । ( ব্যস্ত হইয়া ) না না কেদারবাবু! আমি কিছু মনে ভাবছি নে। কিন্তু অবিনাশ, সত্যি কথা বলতে কি, তোমার ঠাট্টাগুলো কিছু রূঢ় হয়ে পড়ছে। বন্ধুকেও— অবিনাশ । আমি তো ঠাট্টা করছি নে— বৈকুণ্ঠ । আঁ্যা ! ঠাট্টা নয়! অভদ্র কোথাকার ! কেদারবাবু আমার ঘরে আসেন সে আমার সৌভাগ্য। তুই আমার সামনে তাকে অপমান করিস ! কেদার। আহা, রাগ করবেন না। বৈকুণ্ঠবাবু— অবিনাশ । দাদা, মিথ্যা র্যাগ করছে কেন ? কেদারের আবার অপমান কিসের ? বৈকুণ্ঠ। আবার ! তোর সঙ্গে আর আমি কথা কব না। অবিনাশ। মাপ করো দাদা ! ( বৈকুণ্ঠ নিরুত্তর )- মাপ করো, আমার অপরাধ হয়েছে! ( নিরুত্তর )— দাদা, রাগ করে থেকে না বৈকুণ্ঠ। তবে শোন। কেদারবাবুর একটি বিবাহযোগ্য পরমা সুন্দরী বয়ঃপ্রাপ্ত শ্যালী আছে, তোরাও তো বিবাহযোগ্য বয়স হয়েছে— এখন— কেদার । যোগ্যং যোগ্যেন যোজিয়েৎ । বৈকুণ্ঠ। ঠিক বলেছেন, আমার মনের কথাটি বলেছেন। কেদার। আমারও ঠিক ঐ মনের কথা । অবিনাশ। কিন্তু দাদা, আমার মনের কথা একটু স্বতন্ত্র। আমার বিবাহ করবার ইচ্ছে নেই। কেদার। অবিনাশ, তুমি হাসালে। বিবাহ করবার পূর্বেই অনিচ্ছে! ওর নাম কী, করবার পরে যদি হত তো মানে পাওয়া যেত । বৈকুণ্ঠ। মেয়েটি তো সুন্দরী— অবিনাশ। তাকে দেখেছি নাকি ? বৈকুণ্ঠ। দেখতে হবে কেন ? কেদারবাবু যে বলছেন। ! অবিনাশ নিরুত্তর কেদার । বিশ্বাস হল না ? কী বলে, আমার আকৃতি দেখেই ভয় পেলে— কিন্তু ওর নাম কী, সে যে আমার শ্যালী, আমার স্ত্রীর সহােদরা, আমার বংশের কেউ নয় । একবার স্বচক্ষে দেখে এলে হয় না ? বৈকুণ্ঠ। সে তো বেশ কথা, দেখে এসো-না অবিনাশ।