পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\SOQbr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বৈকুণ্ঠ। কাজের তো সীমা নেই! ছোড়াটার মাথা একেবারে ঘুরে গেছে।- কিন্তু কেদারবাবুকে না পেলে তো আমার চলছে না। ভূত্যের প্রবেশ ভৃত্য। বাবু, মানিকতলা থেকে মালী এসেছে। অবিনাশ । এখন যেতে বলে দে ! [ভূত্যের প্রস্থান বৈকুণ্ঠ। যাও-না, একবার শুনেই এসো-না ! ততক্ষণ আমি কেদারবাবুর কাছে আছি— কেদার। আমার জন্যে ব্যস্ত হবেন না, ওর নাম কী, আমি আজ তবেঅবিনাশ । না কেদার, একটু বোসো। বৈকুণ্ঠ। না, না, আপনি বসুন। দেখো অবিনাশ, গাছপালা সম্বন্ধে তোমার যে আলোচনাটা ছিল সেটা অবহেলা কোরো না । সেটা বড়ো স্বাস্থ্যকর, বড়োই আনন্দজনক । অবিনাশ। কিছু অবহেলা করব না। দাদা, কিন্তু এখন একটা বড়ো দরকারি কাজ আছে। বৈকুণ্ঠ। আচ্ছা, তা হলে তোমরা একটু বোসো — ভালোমানুষ পেয়ে বেচারা কেদারবাবুকে ভারি মুশকিলে ফেলেছে- একটু বিবেচনা নেই— বয়সের ধর্ম! কেদার। আবার এখানে কী করতে এলি ? তিনকড়ি। ভয় কী দাদা, দু জন আছে— একটিকে তুমি নাও, একটি আমাকে দাও। বৈকুণ্ঠ। বেশ কথা বাবা, এসো, আমার ঘরে এসো। কেদার। তিনকড়ে, তুই আমাকে মাটি করলি! তিনকড়ি। সববাই বলে তুমিই আমাকে মাটি করেছ। (কাছে গিয়া ) রাগ কর কেন দাদা, যে অবধি তোমাকে দেখেছি সেই অবধি আপনি বাপ দাদা খুড়ো কাউকে দু চক্ষে দেখতে পারি নে। এত ভালোবাসা । কেদার। বাজে বকিস কেন, তোর আবার বাপ দাদা কোথা ! তিনকড়ি । বললে বিশ্বাস করবি নে, কিন্তু আছে ভাই। ওতে তো খরচও নেই, মাহাত্মিও নেই- তিনকড়েরও বাপ দাদা থাকে, যদি আমার নিজে করে নিতে হত। তবে কি আর থাকত ? ককখনো না! বৈকুণ্ঠ । হা হা হা হাঃ ! ছেলেটি বেশ কথা কয়। চলো বাবা, আমার ঘরে চলো । [উভয়ের প্রস্তান অবিনাশ। খুব সংক্ষেপে লিখলুম, বুঝেছি কেদার— কেবল একটি লাইন— ‘দেবীপদতলে বিমুগ্ধ ভক্তের পূজোপহার” । d কেদার। তা, কোনো কথাটিই বাদ দেওয়া হয় নি- দিব্যি হয়েছে—তবে আজ উঠি । অবিনাশ। কিন্তু “পদতলে’ কথাটা কি ঠিক খাটল— ওটা কিনা আংটি— কেদার। কী বলে ভালো, তা “করতলেই লিখে দাও-না ! অবিনাশ। কিন্তু করতলে পূজোপহারটা কেমন শোনাচ্ছে! কেদার। তা, নাহয় পূজোপহার নাই হল, ওর নাম কী৷— অবিনাশ। শুধু উপহার” লিখলে বড়ো ফাকা শোনায়, ‘পূজোপহারই থাক— কেদার। তা থাক-না- অবিনাশ। কিন্তু তা হলে “করতলোটা কী করা যায়কেদার। ওটা পদতলেই করে দাও-না- ওর নাম কী, তাতে ক্ষতি কী। আমি তা হলে উঠি । অবিনাশ। একটু রোসো-না। আংটি সম্বন্ধে পদতলে কথাটা খাপছাড়া শোনাচ্ছে। কেদার। খাপছাড়া কেন হবে! তুমি তো পদতলে দিয়ে খালাস, তার পরে ওর নাম কী, তিনি