পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wVO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী দেবে না ! তোমাদের একটু বিবেচনা নেই! আসুন কেদারবাবু। কেদার। ওর নাম কী, চলুন [উভয়ের প্রস্থান অবিনাশ। মনোরমা তোমার কে হন তিনকড়ি ? তিনকড়ি। তিনি আমার দূরসম্পর্কে বোন হন, কিন্তু সে পরিচয় প্রকাশ হলে তিনি ভারি লজ্জা পাবেন । r অবিনাশ। তার খুব লজ্জা, না তিনকড়ি ? তিনকড়ি। আমার সম্বন্ধে ভারি লজ্জা। কাউকে মুখ দেখাবার জো নেই। অবিনাশ । না, তোমার সম্বন্ধে বলছি নে, আমার সম্বন্ধে | জান তো তিনকড়ি, আমার সঙ্গে তার একটা সম্বন্ধ- - তিনকড়ি। ওঃ, বুঝেছি। তা তো হতেই পারে। আমার সঙ্গেও একটি কন্যের সম্বন্ধ হয়েছিল— বিবাহের পূর্বে সে তো লজ্জায় মরেই গেল। অবিনাশ।। আঃ, কী বল তিনকড়ি ! তিনকড়ি। শুধু লজ্জা নয়, শুনলুম তার যকৃৎও ছিল। অবিনাশ । মনোরমারতিনকড়ি।। যকৃতের দোষ নেই। অবিনাশ।। আঃ, সে কথা আমি জিজ্ঞাসা করছি নে, আমি হৃদয়ের কথা বলছিতিনকড়ি। মশায়, ও—সব বড়ো শক্ত শক্ত কথা, আমি বুঝি নে। মেয়েমানুষের হৃদয় তিনকড়ি কখনো পায় নি, কখনো প্ৰত্যাশাও করে নি। দিব্যি আছি। অবিনাশ। আচ্ছা, সে থাক— কিন্তু, দেখো তিনকড়ি, মনোরমাকে আমি একটি আংটি উপহার দেব। বুঝলে ? সেইসঙ্গে এক লাইন চিঠি দিতে চাই— তিনকড়ি। ক্ষতি কী ! একটা লাইন বৈ তো নয়, চট করে হয়ে যাবে। दैो অবিনাশ। এই দেখো-না, আমি লিখেছিলুম— ‘দেবীপদতলে বিমুগ্ধ ভক্তের পূজোপহার”। তুমি दळ ? তিনকড়ি। তােমার কথা তুমি বলবে, এর মধ্যে আমার কিছু বলা ভালাে হয় না, সে হল আমার Vt) অবিনাশ । না না, তা বলছি নে। আংটি কি ঠিক পদতলে দেওয়া যায় ! করতলে লিখলে— তিনকড়ি। তা, ওটা লেখা বৈ তো না- পদতলে লিখে করতলে দিলেই হবে, সেজন্যে তো কেউ আদালতে নালিশ করবে না। অবিনাশী না হে না, লেখার তো একটা মানে থাকা চাইতিনকড়ি। আংটি থাকলে আর মানে থাকার দরকার কী ? ওতেই তো বোঝা গেল। অবিনাশ । আংটির চেয়ে কথার দাম বেশি, তা জান ? তিনকড়ি। তা হলে আজ আর তিনকড়েকে হাহাকার করে বেড়াতে হত না। অবিনাশ।। আঃ, কী বকছ তুমি তার ঠিক নেই। একটু মন দিয়ে শোনো দেখি। ও লাইনটা যদি এইরকম লেখা যায় তো কেমন হয়— ‘প্ৰেয়সীর করপদ্মে অনুরক্ত সেবকের প্রণয়োপহার” । তিনকড়ি। বেশ হয়। ܝ অবিনাশ। বেশ হয়! একটা কথা বলে দিলেই হল—“বেশ হয়’ ! একটু ভেবেচিন্তে বলো-না ! তিনকড়ি। ও বাবা! এ যে আবার রাগ করে! বুড়োর শরীরে কিন্তু রাগ নেই। ( প্ৰকাশ্যে) তা, ভেবেচিন্তে দেখলে বোধ হয় গোড়ারটাই ছিল ভালো। অবিনাশ। কেন বলে দেখি । এটাতে কী দোষ হয়েছে। তিনকড়ি। ও বাবা! এটাতে যদি দোষই না থাকবে তো খামক আমাকে ভাবতে বললে কেন ?