পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WV8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মনে করি, ভুলে যাই— আপনার এই ডেকসো আর ঐ গোটাকতক শেলফ। এখান থেকে সরাতে হচ্ছে, আমার বন্ধুরা সর্বদাই আসছে, তাদের বসাবার জায়গা পাচ্ছি নে— বৈকুণ্ঠ। আর তো ঘর দেখি নে— দক্ষিণের ঘরে কেদারবাবু আছেন, ডাক্তার তাকে বিশ্রাম করতে বলেছে— পুবের ঘরটায় কে কে আছেন আমি ঠিক চিনি নে— তা বেণীবাবু বিপিন। বিপিনবাবুবৈকুণ্ঠ। হা হাঁ, বিপিনবাবু—তা, যদি ওগুলো এক পাশে সরিয়ে রাখি তা হলে কি কিছু অসুবিধে হয় ? বিপিন। অসুবিধা আর কী, থাকবার কষ্ট হয়। আমি আবার বেশ একটু ফাকা না হলে থাকতে পারি নে। ‘ভাবতে পারি। নে পরের ভাবনা লো সই!” ঈশানের প্রবেশ বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, এ ঘরে বেণীবাবুর— বিপিন। বিপিনবাবুরবৈকুণ্ঠ। হা, বিপিনবাবুর থাকার কিছু কষ্ট হচ্ছে। ঈশান। কষ্ট হয়ে থাকে তো আর আবশ্যক কী, ওঁর বাপের ঘরদুয়োর কিছু নেই নাকি! বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, চুপ কর। বিপিন। কী রাস্কেল, তুই এতবড়ো কথা বলিস ! ঈশান। দেখো, গালমন্দ দিয়ে না বলছিবৈকুণ্ঠ। আঃ ঈশেন, থাম— বিপিন। আমি তোদের এ ঘরে পায়ের ধুলো মুছতে চাই নে, আমি এখনই চললুম। বৈকুণ্ঠ। যাবেন না বেণীবাবু, আমি গলবস্ত্র হয়ে বলছি মাপ করবেন— (বৈকুণ্ঠকে ঠেলিয়া বিপিনের প্রস্থান ) ঈশেন, তুই কী করলি বল দেখি— তুই আর আমাকে বাড়িতে টিকতে দিলি নে দেখছি। ঈশান। আমিই দিলুম না বটে ! বৈকুণ্ঠ। দেখ ঈশেন, অনেক কাল থেকে আছিস, তোর কথাবার্তাগুলো আমাদের অভ্যাস হয়ে এসেছে, এরা নতুন মানুষ— এরা সইতে পারবে কেন ? তুই একটু ঠাণ্ডা হয়ে কথা কইতে পারিস নে ? ঈশান। আমি ঠাণ্ডা থাকি কী করে ! এদের রকম দেখে আমার সর্বশরীর জুলতে থাকে। বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, ওরা আমাদের নতুন কুটুম্ব, ওরা কিছুতে ক্ষুন্ন হলে অবিনাশের গায়ে লাগবে, সে আমাকেও কিছু বলতে পারবে না, অথচ তার হল— ঈশান। সে তো সব বুঝেছি। সেইজন্যেই তো ছোটাে বয়সে ছোটোবাবুকে বিয়ে দেবার জন্যে কতবার বলেছি। সময়কালে বিয়ে হলে এতটা বাড়াবাড়ি হয় না। বৈকুণ্ঠ। যা, আর বকিস নে ঈশেন, এখন যা, আমি সকল কথা একবার ভেবে দেখি। ঈশান। ভেবে দেখো! এখন যে কথাটা বলতে এসেছিলুম বলে নিই। আমাদের ছোটােমার খুড়ি না পিসি না কে এক বুড়ি এসে দিদিঠাকরুনকে যে দুঃখ দিচ্ছে সে তো আমার আর সহ্য হয় না। বৈকুণ্ঠ। আমার নীরুমাকে ! সে তো কারও কিছুতে থাকে না। ঈশান। তাকে তো দিনরাত্তির দাসীর মতো খাটিয়ে মারছে। তার পরে আবার মাগী তোমার নামে খোটা দিয়ে তাকে বলে কিনা যে, তুমি তোমার ছোটােভাইয়ের টাকায় গায়ে ফু দিয়ে বড়োমানুষি করে বেড়ােচ্ছ! মাগীর যদি র্দাত থাকত তো নোড়া দিয়ে ভেঙে দিতুম না! বৈকুণ্ঠ। তা, নীরু কী বলে ? ঈশান। তিনি তো তার বাপেরই মেয়ে, মুখখানি যেন ফুলের মতো শুকিয়ে যায়, একটি কথা বলে না