পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(? ○ রবীন্দ্র-রচনাবলী VOO আশা একদিন অন্নপূর্ণাকে জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা মাসিম, মেসোেমশায়কে তোমার মনে *ाKएछ ?” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “আমি এগারো বৎসর বয়সে বিধবা হইয়াছি, স্বামীর মূর্তি ছায়ার মতো মনে হয়।” আশা জিজ্ঞাসা করিল, “মাসি, তবে তুমি কাহার কথা ভাব।” সুন্নপূর্ণ ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “আমার স্বামী এখন যাহার মধ্যে আছেন, সেই ভগবানের কথা יין আশা কহিল, “তাহাতে তুমি সুখ পাও ?” অন্নপূর্ণ সস্নেহে আশার মাথায় হাত বুলাইয়া কহিলেন, “আমার সে মনের কথা তুই কি বুঝবি বাছা । সে আমার মন জানে, আর র্যার কথা ভাবি তিনিই জানেন ।” আশা মনে মনে ভাবিতে লাগিল, “আমি র্যার কথা রাত্ৰিদিন ভাবি, তিনি কি আমার মনের কথা জানেন না। আমি ভালো করিয়া চিঠি লিখিতে পারি না বলিয়া তিনি কেন আমাকে চিঠি লেখা ছাড়িয়া দিয়াছেন।” আশা কয়দিন মহেন্দ্রের চিঠি পায় নাই। নিশ্বাস ফেলিয়া মনে মনে সে ভাবিল, “ চোখের বালি যদি হাতের কাছে থাকিত, সে আমার মনের কথা ঠিকমত করিয়া লিখিয়া দিতে পারিত। কুলিখিত তুচ্ছাপত্ৰ স্বামীর কাছে আদর পাইবে না মনে করিয়া চিঠি লিখিতে কিছুতে আশার হাত সরিত না। যতই যত্ন করিয়া লিখিতে চাহিত, ততই তাহার অক্ষর খারাপ হইয়া যাইত। মনের কথা যতই ভালো করিয়া গুছাইয়া লইবার চেষ্টা করিত ততই তাহার পদ কোনোমতেই সম্পূৰ্ণ হইত না । যদি একটিমাত্র ‘শ্ৰীচরণেষু লিখিয়া নাম সহি করিলেই মহেন্দ্ৰ অন্তৰ্য্যামী দেবতার মতো সকল কথা বুঝিতে পারিত, তাহা হইলেই আশার চিঠিলেখা সার্থক হইত। বিধাতা এতখানি ভালোবাসা দিয়াছিলেন, একটুখানি ভাষা দেন নাই কেন। মন্দিরে সন্ধ্যারতির পরে গৃহে ফিরিয়া আসিয়া আশা অন্নপূর্ণার পায়ের কাছে বসিয়া আস্তে আস্তে তাহার পায়ে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিল। অনেকক্ষণ নিঃশব্দের পর বলিল, “মাসি, তুমি যে বল, স্বামীকে দেবতার মতো করিয়া সেবা করা স্ত্রীর ধর্ম, কিন্তু যে স্ত্রী মূখ, যাহার বুদ্ধি নাই, কেমন করিয়া স্বামীর সেবা করিতে হয় যে জানে না, সে কী করিবে ।” অন্নপূর্ণ কিছুক্ষণ আশার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন— একটি চাপা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “বাছা, আমিও তো মুখ, তবুও তো ভগবানের সেবা করিয়া থাকি।” আশা কহিল, “তিনি যে তোমার মন জানেন, তাই খুশি হন। কিন্তু মনে করো, স্বামী যদি মুখের সেবায় খুশি না হন ?” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “সকলকে খুশি করিবার শক্তি সকলের থাকে না, বাছা। স্ত্রী যদি আন্তরিক শ্রদ্ধাভক্তিযত্নের সঙ্গে স্বামীর সেবা ও সংসারের কাজ করে, তবে স্বামী তাহা তুচ্ছ করিয়া ফেলিয়া দিলেও স্বয়ং জগদীশ্বর তাহা কুড়াইয়া লন।” আশা নিরুত্তরে চুপ করিয়া রহিল। মাসির এই কথা হইতে সাস্তুনা গ্রহণের অনেক চেষ্টা করিল, কিন্তু স্বামী যাহাকে তুচ্ছ করিয়া ফেলিয়া দিবেন, জগদীশ্বরও যে তাহাকে সার্থকতা দিতে পরিবেন, এ কথা কিছুতেই তাহার মনে হইল না। সে নতমুখে বসিয়া তাহার মাসির পায়ে হাত বুলাইয়া দিতে व्लाव्लि । অন্নপূর্ণ তখন আশার হাত ধরিয়া তাহাকে আরো কাছে টানিয়া লইলেন ; তাহার মস্তক চুম্বন করিলেন ; রুদ্ধকণ্ঠকে দৃঢ়চেষ্টায় বাধামুক্ত করিয়া কহিলেন, “চুনি, দুঃখে কষ্টে যে শিক্ষালাভ হয় শুধু কানে শুনিয়া তাহা পাইবি না। তোর এই মাসিও একদিন তোর বয়সে তোরই মতো সংসারের সঙ্গে