পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ @ Q汉 অক্ষয় উৎসােহপূর্বক কহিলেন, “তা তো হবেই।” বলিয়া রামপ্রসাদী সুরে গান জুড়িয়া দিলেন দেখব কে তোর কাছে আসে । তুই রবি একেশ্বরী, একলা আমি রইব পাশে। শৈল হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “একেশ্বরী ?” অক্ষয় বলিলেন, “নহয় তোমরা চার ঈশ্বরীই হলে, শাস্ত্ৰে আছে। অধিকন্তু ন দোষায় ।” শৈল কহিল, “আর, তুমিই একলা থাকবে ? ওখানে বুঝি অধিকন্তু খাটে না ?” অক্ষয় কহিলেন, “ওখানে শাস্ত্রের আর-একটা পবিত্ৰ বচন আছে- সর্বমত্যস্তগহিতং।” শৈল। কিন্তু মুখুজ্যোমশায়, ও পবিত্ৰ বচনটা তো বরাবর খাটবে না। আরো সঙ্গী জুটবে। অক্ষয় বলিলেন, “ তোমাদের এই একটি শালার জায়গায় দশশালা বন্দোবস্ত হবে ? তখন আবার নূতন কাৰ্যবিধি দেখা যাবে। ততদিন কুলীনের ছেলেটেলেগুলোকে ঘেষতে দিচ্ছি নে!” এমন সময় চাকর আসিয়া খবর দিল, দুটি বাবু আসিয়াছে। শৈল কহিল, “ঐ বুঝি তারা এল। দিদি আর মা ভাড়ারে ব্যস্ত আছেন, তাদের অবকাশ হবার পূর্বেই ওদের কোনোমতে বিদায় করে শৈল কহিল, “আমরা তোমার সব শালীরা মিলে তোমাকে শালীবাহন রাজা খেতাব দেব।” অক্ষয় । শালীবাহন দি সেকেণ্ড ? শৈল। সেকেণ্ড হতে যাবে কেন ? সে শালীবাহনের নাম ইতিহাস থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তুমি হবে শালীবাহন দি গ্রেট । অক্ষয়। বল কী ? আমার রাজ্যকাল থেকে জগতে নূতন সাল প্রচলিত হবে ? এই বলিয়া অত্যন্ত সাড়ম্বর তান-সহকারে ভৈরবীতে গান ধরিলেন তুমি আমায় করবে মস্ত লোক ! দেবে লিখে রাজার টিকে প্ৰসন্ন ওই চোখ ! শৈলবালার প্রস্থান। ভূতা আদিষ্ট হইয়া দুটি ভদ্রলোককে উপস্থিত করিল। একটি বিসদৃশ লম্বা, রোগা, বুট-জুতা পরা, ধুতি প্ৰায় হাঁটুর কাছে উঠিয়াছে, চোখের নীচে কালি-পড়া, ম্যালেরিয়া রোগীর চেহারা— বয়স বাইশ হইতে বত্ৰিশ পর্যন্ত যেটা খুশি হইতে পারে। আর-একটি বেঁটেখাটাে, অত্যন্ত দাড়ি-গোফ-সংকুল, নাকটি বটিকাকার, কপালটি টিবি, কালোকোলো, গোলগাল। । অক্ষয় অত্যন্ত সৌহার্দ্যসহকারে উঠিয়া অগ্রসর হইয়া প্রবল বেগে শেকহ্যান্ড করিয়া দুটি জেরোমায়া, বসুন বসুনা! ওরে বরফ-জল নিয়ে আয় রে, তামাক দে!” রোগা লোকটি সহসা বিজাতীয় সম্ভাষণে সংকুচিত হইয়া মৃদুস্বরে বলিল, “আজ্ঞে, আমার নাম মৃত্যুঞ্জয় গাঙ্গুলি।” বেঁটে লোকটি বলিল, “আমার নাম শ্ৰীদারুকেশ্বর মুখোপাধ্যায়।” অক্ষয়। ছি, মশায়! ও নামগুলো এখনো ব্যবহার করেন বুঝি ? আপনাদের ক্রিশচান নাম ? আগন্তুকদিগকে হতবুদ্ধি নিরুত্তর দেখিয়া কহিলেন, “এখনো বুঝি নামকরণ হয় নি ? তা, তাতে বিশেষ কিছু আসে যায় না, ঢের সময় আছে।” বলিয়া নিজের গুড়গুড়ির নল মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে অগ্রসর করিয়া দিলেন। সে লোকটা ইতস্তত করিতেছে দেখিয়া বলিলেন, “বিলক্ষণ! আমার সামনে আবার লজ্জা ! সাত বছর বয়স থেকে লুকিয়ে তামাক খেয়ে পেকে উঠেছি। ধোওয়া লেগে লেগে বুদ্ধিতে কুল পড়ে গেল ! লাজ যদি করতে হয় তা হলে আমার তো আর ভদ্রসমাজে মুখ দেখাবার জো থাকে না।” তখন সাহস পাইয়া দারুকেশ্বর মৃত্যুঞ্জয়ের হাত হইতে ফস করিয়া নল কাড়িয়া লইয়া ফাঁড়ফড় N ||\) 8