পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G \DS রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অক্ষয় কানের কাছে আসিয়া লক্ষেী ঠংরিতে ধরাইয়া দিলেন শুধু ডাল ভাত জল পথ্য করে। শুনিয়া দারুকেশ্বর উৎসাহসহকারে গানটা ধরিল এবং মৃত্যুঞ্জয়ও অক্ষয়ের গোপন ঠেলা খাইয়া সলজভাবে মৃদু মৃদু যোগ দিতে লাগিল। অক্ষয় আবার কানে কানো ধরাইয়া দিলেন ধরে হুইস্কি সোডা আর মুগিমিটন। অমনি দারুকেশ্বর মাতিয়া উঠিয়া উর্ধর্বস্বরে ঐ পদটা ধরিল এবং অক্ষয়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের প্রবল উৎসাহে মৃত্যুঞ্জয়ও কোনোমতে সঙ্গে সঙ্গে যোগ দিয়া গেল। অক্ষয় পুনশ্চ ধরাইয়া দিলেন যাও ঠাকুর চৈতন চুটকি নিয়া, এসো দাড়ি নাডি কলিমাদি মিঞা ! যতই উৎসাহসহকারে গান চলিল, দ্বারের পার্শ্ব হইতে উসখুসি শব্দ শুনা যাইতে লাগিল এবং অক্ষয় নিরীহ ভালোমানুষটির মতো মাঝে মাঝে সেই দিকে কটাক্ষপাত করিতে লাগিলেন। এমন সময় ময়লা ঝাড়ন হাতে কলিমন্দি আসিয়া সেলাম করিয়া দাড়াইল । দারুকেশ্বর উৎসাহিত হইয়া কহিল, “এই—যে চাচা । আজ রান্নাটা কী হয়েছে বলো দেখি ” সে অনেকগুলা ফর্দ দিয়া গেল। দারুকেশ্বর কহিল, “ কোনোটাই তো মন্দ শোনাচ্ছে না হে। ( অক্ষয়ের প্রতি ) মশায়, কী বিবেচনা করেন ? ওর মধ্যে বাদ দেবার কি কিছু আছে ?” অক্ষয় অন্তরালের দিকে কটাক্ষ করিয়া কহিলেন, “ সে আপনারা যা ভালো বোঝেন ।” অক্ষয়। তা তো বটেই, ওঁরা সকলেই পূজ্য। কলিমাদি সেলাম করিয়া চলিয়া গেল। অক্ষয় কিঞ্চিৎ গলা চড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মশায়রা কি তা হলে আজ রাত্রেই ক্ৰিশ্চন হতে চান ?” খানার আশ্বাসে প্ৰফুল্লচিত্ত দারুকেশ্বর কহিল, “আমার তো কথাই আছে, শুভস্য শীঘ্ৰং।। আজই ক্ৰিশ্চন হব, এখনই ক্ৰিশ্চন হব, ক্রিশচান হয়ে তবে অন্য কথা। মশায়, আর ঐ পুঁইশাক কলাইয়ের ডাল খেয়ে প্রাণ বঁাচে না। আনুন। আপনার পাদ্রি ডেকে।” বলিয়া পুনশ্চ উচ্চস্বরে গান ধরিল— যাও ঠাকুর চৈতন চুটকি নিয়া, এসো দাডি নাড়ি কলিমাদি মিঞা ! অক্ষয় উঠিয়া দ্বারের অন্তরালে গেলে জগত্তারিণী কহিলেন, “এ কী ! কাণ্ডটা কী ?” অক্ষয় গভীরমুখে কহিলেন, “মা, সে-সব পরে হবে, এখন ওরা হুইস্কি চাচ্ছে, কী করি ? তোমার পায়ে মালিশ করবার জন্যে সেই- যে ব্ৰাণ্ডি এসেছিল, তার কি কিছু বাকি আছে ?” জগত্তারিণী হতবুদ্ধি হইয়া কহিলেন, “বল কী বাছা ? ব্রাণ্ডি খেতে দেবে ?” অক্ষয় কহিলেন, “কী করব মা, শুনেইছ তো, ওর মধ্যে একটি ছেলে আছে যার জল খেলেই সন্দি হয়, মদ না খেলে আর-একটির মুখে কথাই বের হয় না।” জগত্তারিণী কহিলেন, “ক্রিশচীন হবার কথা কী বলছে ওরা ?” অক্ষয় কহিলেন, “ওরা বলছে হিন্দু হয়ে খাওয়া-দাওয়ার বড়ো অসুবিধে, পুঁইশাক কলাইয়ের ডাল খেয়ে ওদের অসুখ করে!” い জগত্তারিণী অবাক হইয়া কহিলেন, “তাই বলে কি ওদের আজ রাতেই মুগি খাইয়ে ক্ৰিশ্চন করবে নাকি ?”