পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(?○8 রবীন্দ্র-রচনাবলী চাও। আমাদের হাতে টিকে নেই ? আমাদের সঙ্গে যদি লােগ তা হলে তোমার দু-দুটো বিয়ে দিয়ে দেব- মাথায় যে-কটি চুল আছে সামলাতে পারবে না ! রসিক। দেখা দিদি, দুটাে আস্ত জন্তু এনেছিলুম বলেই তো রক্ষে পেলি, যদি মধ্যম রকমের হত তা হলেই তো বিপদ ঘটত। যাকে জন্তু বলে চেনা যায় না। সেই জন্তুই ভয়ানক । অক্ষয়। সে কথা ঠিক। মনে মনে আমার ভয় ছিল, কিন্তু একটু পিঠে হাত বুলোবামাত্রই চটপট শব্দে লেজ নড়ে উঠল। কিন্তু মা বলছেন কী ? রসিক। সে যা বলছেন সে আর পাচজনকে ডেকে ডেকে শোনাবার মতো নয়। সে আমি অন্তরের মধ্যেই রেখে দিলুম। যা হােক, শেষে এই স্থির হয়েছে, তিনি কাশীতে র্তার বোনপোর কাছে। যাবেন, সেখানে পাত্রেরও সন্ধান পেয়েছেন, তীর্থদর্শনও হবে। নীরবালা। বল কী রকিসদাদা ! তা হলে এখানে আমাদের রোজ রোজ নতুন নতুন নমুনো দেখা বন্ধ ? নৃপবালা। তোর এখনো শখ আছে নাকি ? নীরবালা। এ কি শখের কথা হচ্ছে ? এ হচ্ছে শিক্ষা। রোজ রোজ অনেকগুলি দৃষ্টান্ত দেখতে দেখতে জিনিসটা সহজ হয়ে আসবে, যেটিকে বিয়ে করবি সেই প্ৰাণীটিকে বুঝতে কষ্ট হবে না। নৃপবালা। তোমার প্রাণীকে তুমি বুঝে নিয়ো, আমার জন্যে তোমার ভাবতে হবে না। নীরবালা। সেই কথাই ভালো— তুইও নিজের জন্যে ভাবিস, আমিও নিজের জন্যে ভাবিব, কিন্তু রসিকদাদাকে আমাদের জন্যে ভাবতে দেওয়া হবে না। নৃপ নীরুকে বলপূর্বক টানিয়া লইয়া গেল। শৈলবালা ঘরে প্রবেশ করিয়াই বলিল, “রসিকদা, তোমার তো মার সঙ্গে কাশী গেলে চলবে না । আমরা যে চিরকুমার-সভার সভ্য – আবেদনপত্রের সঙ্গে প্ৰবেশিকার দশটা টাকা পাঠিয়ে দিয়ে বসে আছি ।” অক্ষয় কহিলেন, “মার সঙ্গে কাশী যাবার জন্যে আমি লোক ঠিক করে দেব এখন, সেজন্যে ভাবনা নেই।” শৈল। এই-যে মুখুজ্যোমশায়। তুমি তাদের কি বানর বানিয়েই ছেড়ে দিলে! শেষকালে বেচারাদের জন্যে আমার মায়া করছিল। অক্ষয়। বানর কেউ বানাতে পারে না শৈল, ওটা পরমা প্রকৃতি নিজেই বানিয়ে রাখেন। ভগবানের বিশেষ অনুগ্রহ থাকা চাই। যেমন কবি হওয়া আর-কি। লেজই বল কবিত্বই বল ভিতরে না। থাকলে জোর করে টেনে বের করবার জো নেই! আলো দিয়ে গেছে, মিটমিট করছে। ওকে বলে বলে পারা গেল না।” অক্ষয়। সে বেটা জানে কিনা অন্ধকারেই আমাকে বেশি মানায় । পুরবালা। আলোতে মানায় না ? বিনয় হচ্ছে না কি ? এটা তো নতুন দেখছি। অক্ষয়। আমি বলছিলুম, বেহারা বেটা চাদ বলে আমাকে সন্দেহ করেছে। পুরবালা । ওঃ, তাই ভালো । তা, ওর মাইনে বাড়িয়ে দাও !— কিন্তু রসিকদাদা, আজ কী কাণ্ডটাই করলে | রসিক। ভাই, বর ঢের পাওয়া যায়, কিন্তু সবাই বিবাহযোগ্য হয় না— সেইটের একটা সামান্য উদাহরণ দিয়ে গেলুম। পুরবালা। সে উদাহরণ না দেখিয়ে দুটাে-একটা বিবাহযোগ্য বরের উদাহরণ দেখালেই তো ভালো হত । শৈল । সে ভার আমি নিয়েছি দিদি। পুরবালা। তা আমি বুঝেছি। তুমি আর তোমার মুখুজ্যোমশায় মিলে কদিন ধরে যেরকম পরামর্শ চলছে, একটা কী কাণ্ড হবেই।