পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ G 8 J পুরবালা। আঃ— থামো। অক্ষয় । বসন্তনিশীথে প্ৰেয়সী পুরবালা। আঃ— কী বকছ তার ঠিক নেই! অক্ষয়। বসন্তনিশীথে যখন প্ৰেয়সী গর্জন করে বলেন, “আমি কালই বাপের বাড়ি চলে যাব, আমার এক দণ্ড এখানে থাকতে ইচ্ছে নেই— আমার হাড় কালি হল— আমার পুরবালা। হাগো মশায়, কবে তোমার প্ৰেয়সী বাপের বাড়ি যাব বলে বসন্তনিশীথে গর্জন করেছে ? অক্ষয়। ইতিহাসের পরীক্ষা ? কেবল ঘটনা রচনা করে নিষ্কৃতি নেই ? আবার সন-তারিখ-সুদ্ধ মুখে মুখে বানিয়ে দিতে হবে ? আমি কি এতবড়ো প্ৰতিভাশালী ? রসিক । ( পুরবালার প্রতি ) বুঝেছ ভাই, সোজা করে ও তোমার কথা বলতে পারে না— ওর এত ক্ষমতাই নেই— তাই উলটে বলে ; আদরে না কুলোলে গাল দিয়ে আদর করতে হয়। পুরবালা। আচ্ছা মল্লিনাথজি, তোমার আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। মা যে শেষকালে তোমাকেই কাশী নিয়ে যাবেন স্থির করেছেন। রসিক। তা, বেশ তো, এতে আর ভয়ের কথাটা কী ? তীর্থে যাবার তো বয়সই হয়েছে। এখন তোমাদের লোলকাটাক্ষে এ বৃদ্ধের কিছুই করতে পারবে না— এখন চিত্ত চন্দ্রচূড়ের চরণে—— মুগ্ধশ্নিগ্ধবিদগ্ধমুগ্ধমধুরৈলোলৈঃ কটাক্ষৈরলং চেতঃ সম্প্রতি চন্দ্রচূড়চরণাধ্যানামৃতে বর্ততে। পুরবালা। সে তো খুব ভালো কথা— তোমার উপরে আর কটাক্ষের অপব্যয় করতে চাই নে, এখন চন্দ্রচূড় চরণে চলো— তা হলে মাকে ডাকি ! রসিক । ( করজোড়ে ) বড়দিদি ভাই, তোমার মা আমাকে সংশোধনের বিস্তর চেষ্টা করছেন, কিন্তু একটু অসময়ে সংস্কারকার্য আরম্ভ করেছেন— এখন তার শাসনে কোনো ফল হবে না। বরঞ্চ এখনো নষ্ট হবার বয়স আছে, সে বয়সটা বিধাতার কৃপায় বরাবরই থাকে, লোলকিটাক্ষটা শেষকাল পর্যন্ত খাটে, কিন্তু উদ্ধারের বয়স আর নেই। তিনি এখন কাশী যাচ্ছেন, কিছুদিন এই বৃদ্ধ শিশুর জগত্তারিণীর প্রবেশ জগত্তারিণী। বাবা, তা হলে আসি । অক্ষয়। চললে না কি মা ? রসিকদাদা যে এতক্ষণ দুঃখ করছিলেন যে তুমি— রসিক । ( ব্যাকুলভাবে) দাদার সকল কথাতেই ঠাট্টা!! মা, আমার কোনো দুঃখ নেই— আমি কেন দুঃখ করতে যাব ? অক্ষয়। বলছিলে না, যে, বড়োমা একলাই কাশী যাচ্ছেন, আমাকে সঙ্গে নিলেন না ? রসিক। হা, সে তো ঠিক কথা। মনে তো লাগতেই পারে—তবে কি না মা যদি নিতান্তই— জগত্তারিণী। না বাপু, বিদেশে তোমার রসিকদাদাকে সামলাবে কে ? ওঁকে নিয়ে পথ চলতে পারব না । পুরবালা। কেন মা, রসিকদাদাকে নিয়ে গেলে উনি তোমাকে দেখতে শুনতে পারতেন। জগত্তারিণী। রক্ষে করো, আমাকে আর দেখে শুনে কােজ নেই। তোমার রসিকদাদার বুদ্ধির পরিচয় ঢের পেয়েছি। রসিক। (টাকে হাত বুলাইতে বুলাইতে ) তা মা, যেটুকু বুদ্ধি আছে তার পরিচয় সর্বদাই দিচ্ছি— ও তো চেপে রাখবার জো নেই— ধরা পড়তেই হবে। ভাঙা চাকাটাই সব চেয়ে খড় খড় করে— তিনি যে ভাঙা সেটা পাড়াসুদ্ধ খবর পায়। সেইজন্যেই বড়োমা চুপচাপ করে থাকতেই চাই, কিন্তু তুমি যে আবার চালাতেও ছােড় না।