পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নিবন্ধ ( 8 (? রসিক | তা তো বটেই, ব্যাকরণ বাচিয়ে তো চলতেই হবে। ভগবান পাণিনি বোপদেব এরা কী জন্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ? কিন্তু ভাই শ্ৰীমতী শৈলবালার উত্তর চাপাকান-প্ৰত্যয় করলেই কি ব্যাকরণ রক্ষে হয় । অক্ষয়। নতুন মুগ্ধবোধে তাই লেখে। আমি লিখে পড়ে দিতে পারি, চিরকুমার-সভার মুগ্ধদের কাছে শৈল যেমন প্ৰত্যয় করাবে তারা তেমনি প্রত্যয় যাবেন। কুমারদের ধাতু আমি জানি কি না। পুরবালা একটুখানি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া শৈলকে কহিলেন, “তোর মুখুজ্যোমশায়কে আর এই বুড়ো সমবয়সীটিকে নিয়ে তোর খেলা তুই আরম্ভ কর— আমি মার সঙ্গে কাশী চললুম।” পুরবালা এই-সকল নিয়মবিরুদ্ধ ব্যাপার মনে মনে পছন্দ করিত না। কিন্তু তাহার স্বামীর ও ভগিনীটির বিচিত্ৰ কৌতুকলীলায় সর্বদা বাধা দিতেও তাহার মন সরিত না। নিজের স্বামিসৌভাগ্যের কথা স্মরণ করিয়া বিধবা বোনটির প্রতি তাহার করুণা ও প্রশ্রয়ের অন্ত ছিল না | ভাবিত, হতভাগিনী যেমন করিয়া ভুলিয়া থাকে থাক। পুরবালা জিনিসপত্র গুছাইতে গেল। এমন সময় নৃপবালা ও নীরবালা ঘরে প্রবেশ করিয়াই পলায়নোদ্যত হইল। নীর দরজার আড়াল হইতে আর-একবার ভালো করিয়া তাকাইয়া “ মেজদিদি” বলিয়া ছুটিয়া আসিল। কহিল, “ মেজদিদি, তোমাকে ভাই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ঐ চাপিকানে বাধছে। মনে হচ্ছে তুমি যেন কোন রূপকথার রাজপুত্ৰ, তেপান্তর-মাঠ পেরিয়ে আমাদের উদ্ধার করতে এসেছি।” নীরর সমুচ্চ কণ্ঠস্বরে আশ্বস্ত হইয়া নৃপও ঘরে প্রবেশ করিয়া মুগ্ধনেত্ৰে চাহিয়া রহিল। নীর নয়, ও তোর দুষ্যন্ত নয়— ও আমাদের মেজদিদি ৷” রাসিক । ইয়মধিক মনোজ্ঞা চাপিকানেন।াপি তাম্বী। কিমিব হি মধুরাণাং মণ্ডনং নাকৃতী নাম । অক্ষয়। মূঢ়ে, তোরা কেবল চাপিকানটা দেখেই মুগ্ধ! গিলটির এত আদর ? এ দিকে যে খাটি নীরবালা। আজকাল খাটি সোনার দর যে বড়ো বেশি, আমাদের এই গিলটিই ভালো ! কী বল ভাই মেজদিদি !—বলিয়া শৈলর কৃত্ৰিম গোফটা একটু পাকাইয়া দিল। রসিক । ( নিজেকে দেখাইয়া ) এই খাটি সোনাটি খুব সস্তায় যাচ্ছে ভাই— এখনো কোনো ট্যাকশালে গিয়ে কোনো মহারানীর ছাপটি পর্যন্ত পড়ে নি! নীরবালা। আচ্ছা বেশ, সেজদিদিকে দান করলুম। ( বলিয়া রসিকদাদার হাত ধরিয়া নৃপর হাতে সমপণ করিল ) রাজি আছিস তো ভাই ? নৃপবালা। তা আমি রাজি আছি। — বলিয়া রসিকদাদাকে একটা চৌকিতে বসাইয়া সে তাহার মাথার পাকা চুল তুলিয়া দিতে লাগিল। নীর শৈলর কৃত্ৰিম গোফে তা দিয়া পাকাইয়া তুলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। শৈল কহিল, “আঃ, কী করছিস, আমার গোফ পড়ে যাবে।” রসিক। কাজ কী, এ দিকে আয়-না ভাই, এ গোফ কিছুতেই পড়বে না। নীরবালা। আবার ! ফের ! সেজদিদির হাতে সঁপে দিলুম কী করতে ? আচ্ছা রসিকদাদা, তোমার মাথার দুটাে-একটা চুল কাচা আছে, কিন্তু গোফ আগাগোড়া পাকালে কী করে ? রসিক। কারও কারও মাথা পাকবার আগে মুখটা পাকে । নীরবালা। দিদিদের সভাটা কোন ঘরে বসবে মুখুজ্যোমশায় ? অক্ষয় । আমার বসবার ঘরে । নীরবালা। তা হলে সে ঘরটা একটু সাজিয়ে গুজিয়ে দিই গে । অক্ষয়। যতদিন আমি সে ঘরটা ব্যবহার করছি, একদিনও সাজাতে ইচ্ছে হয় নি বুঝি ? নীরবালা। তোমার জন্যে ঝড় বেহারা আছে, তবু বুঝি আশা মিটাল না ? ?) 9ܢ | | ܓ