পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ と S রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী রসিক । শ্ৰীঅবলাকান্ত চট্টোপাধ্যায়। রসিক। নামটি আমাদের সভার উপযোগী নয়। স্বীকার করি। নামটির প্রতি আমারও বিশেষ মমত্ব নেই- যদি পরিবর্তন করে বিক্রমসিংহ বা ভীমসেন বা অন্য কোনো উপযুক্ত নাম রাখেন তাতে উনি আপত্তি করবেন না। যদিচ শাস্ত্ৰে আছে বটে ‘স্বনাম পুরুষো ধন্যঃ”, কিন্তু উনি অবলাকান্ত নামটির দ্বারাই জগতে পৌরুষ অর্জন করতে ব্যাকুল নন। শ্ৰীশ কহিল, “বলেন কী মশায়! নাম তো আর গায়ের বস্ত্র নয়, যে বদল করলেই হল।” রসিক। ওটা আপনাদের একেলে সংস্কার শ্ৰীশবাবু। নামটাকে প্রাচীনেরা পোশাকের মধ্যেই গণা করতেন। দেখুন-না কেন, অর্জনের পিতৃদত্ত নাম কী ঠিক করে বলা শক্ত- পার্থ, ধনঞ্জয়, সব্যসাচী, লোকের যখন যা মুখে আসত তাই বলেই ডাকত। দেখুন নামটাকে আপনারা বেশি সত্য মনে করবেন। না ; ওঁকে যদি ভুলে আপনি অবলাকান্ত নাও বলেন উনি লাইবেলের মোকদ্দমা আনবেন না। শ্ৰীশ হাসিয়া কহিল, “আপনি যখন এতটা অভয় দিচ্ছেন তখন অত্যন্ত নিশ্চিন্ত হলুম, কিন্তু ওর ক্ষমাগুণের পরিচয় নেবার দরকার হবে না— নাম ভুল করব না মশায় ।” রসিক। আপনি না করতে পারেন, কিন্তু আমি করি মশায় । উনি আমার সম্পর্কে নাতি হন— সেইজন্যে ওঁর সম্বন্ধে আমার রসনা কিছু শিথিল, যদি কখনো এক বলতে আর বলি সেটা মাপ করবেন । শ্ৰীশ উঠিয়া কহিল, “অবলাকাস্তবাবু, আপনি এ-সমস্ত কী আয়োজন করেছেন ? আমাদের সভার কার্যাবলীর মধ্যে মিষ্টান্নটা ছিল না।” রসিক । ( উঠিয়া ) সেই ক্রটি যিনি সংশোধন করছেন তাকে সভার হয়ে ধন্যবাদ দিই । শ্ৰীশের মুখের দিকে না চাহিয়া থালা সাজাইতে সাজাইতে শৈল কহিল, “শ্ৰীশবাবু, আহারটাও কি আপনাদের নিয়মবিরুদ্ধ ?” - শ্ৰীশ দেখিল কণ্ঠস্বরটিও অবলা নামের উপযুক্ত। কহিল, “এই সভ্যটির আকৃতি নিরীক্ষণ করে দেখলেই ও সম্বন্ধে কোনো সংশয় থাকবে না ।” বলিয়া বিপুলায়তন বিপিনকে টানিয়া আনিল । বিপিন কহিল, “নিয়মের কথা যদি বলেন অবলাকান্তবাবু, সংসারের শ্রেষ্ঠ জিনিসমােত্রই নিজের মানে না। যে মিষ্টান্নগুলি সংগ্রহ করেছেন এর সম্বন্ধেও কোনো সভার নিয়ম খাটতে পারে না— এর একমাত্র নিয়ম, বসে যাওয়া এবং নিঃশেষ করা। ইনি যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ জগতের অন্য সমস্ত নিয়মকে দ্বারের কাছে অপেক্ষা করতে হবে।” শ্ৰীশ কহিল, “ তোমার হল কী বিপিন ? তোমাকে খেতে দেখেছি বটে, কিন্তু এক নিশ্বাসে এত কথা কইতে শুনি নি তো ।” বিপিন। রসনা উত্তেজিত হয়েছে, এখন সরস বাক্য বলা আমার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হয়েছে। যিনি আমার জীবনবৃত্তান্ত লিখবেন, হায়, এ সময়ে তিনি কোথায় ? রসিক টাকে হাত বুলাইতে বুলাইতে কহিলেন, “আমার দ্বারা সে কাজটা প্রত্যাশা করবেন না, আমি অত দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে পারব না।” নূতন ঘরের বিলাসসজ্জার মধ্যে আসিয়া চন্দ্ৰমাধববাবুর মনটা বিক্ষিপ্ত হইয়া গিয়াছিল। তাহার উৎসাহস্ৰোত যথাপথে প্রবাহিত হইতেছিল না। তিনি ক্ষণে ক্ষণে কাৰ্যবিবরণের খাতা, ক্ষণে ক্ষণে নিজের করকোষ্ঠী অকারণে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতেছিলেন। শৈল তাহার সম্মুখে গিয়া সবিনয়ে নিবেদন করুল, "সভার কার্যের যদি কিছু ব্যাঘাত করে থাকি তো মাপ করবেন, চন্দ্ৰবাবু, কিছু 5-” i চন্দ্ৰবাবু শৈলকে নিকটে পাইয়া তাহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “এ-সমস্ত সামাজিকতায়