পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ じbr রবীন্দ্র-রচনাবলী অক্ষয়। রাজি আছি, কিন্তু অপরাধটা কী আগে বলো । শ্ৰীশ । খবর না দিয়েই অক্ষয়। তোমার অভ্যর্থনার জন্য মু্যনিসিপ্যালিটির কাছ থেকে যখন বাজেট স্যাংশন করে নিতে হয় না। তখন নাহয় খবর না দিয়েই এলে শ্ৰীশবাবু! শ্ৰীশ। আপনি যদি বলেন, এখানে আমার অসময়ে অনধিকার প্রবেশ হয় নি তা হলেই হল। অক্ষয়। তাই বললেম। তুমি যখনই আসবে তখনই সুসময়, এবং যেখানে পদার্পণ করবে: সেইখানেই তোমার অধিকার— শ্ৰীশবাবু, স্বয়ং বিধাতা সর্বত্র তোমাকে পাসপোর্ট দিয়ে রেখেছেন। একটু বােসো, অবলাকাস্তবাবুকে খবর পাঠিয়ে দিই। (স্বগত) না পলায়ন করলে চিঠি শেষ করতে পারব না । {ॐdट শ্ৰীশ। চক্ষের সম্মুখ দিয়ে একজোড়া মায়া-স্বর্ণমৃগী ছুটে পালাল ; ওরে নিরস্ত্ৰ ব্যাধ, তোর ছোটবার ক্ষমতা নেই! নিকষের উপর সোনার রেখার মতো চকিত চোখের চাহনি দৃষ্টিপথের উপরে যেন আঁকা রয়ে গেল ! শ্ৰীশ। সন্ধেবেলায় এসে আপনাদের তো বিরক্ত করি নি রসিকবাবু ? রসিক। ভিক্ষুকক্ষে বিনিক্ষিপ্তঃ কিমিক্ষুনীরসো ভবেৎ ? শ্ৰীশবাবু, আপনাকে দেখে বিরক্ত হব আমি কি এতবড়ো হতভাগ্য ! শ্ৰীশ। অবলাকাস্তবাবু বাড়ি আছেন তো ? রাসিক । আছেন বৈকি, এলেন বলে । শ্ৰীশ । না না, যদি কাজে থাকেন তা হলে তাকে ব্যস্ত করে কােজ নেই— আমি কুঁড়ে লোক, রসিক । সংসারে সেরা লোকেরাই কুঁড়ে এবং বেকার লোকেরাই ধন্য। উভয়ের সম্মিলন হলেই মণিকাঞ্চনযোগ। এই কুঁড়ে-বোকারের মিলনের জন্যেই তো সন্ধেবেলাটার সৃষ্টি হয়েছে। যোগীদের জন্যে সকালবেলা, রোগীদের জন্যে রাত্রি, কাজের লোকের জন্যে দশটা-চারটে, আর সন্ধেবেলাটা, সত্যি কথা বলছি, চিরকুমার-সভার অধিবেশনের জন্যে চতুমুখ সৃজন করেন নি। কী বলেন শ্ৰীশবাবু ? শ্ৰীশ ! সে কথা মানতে হবে বৈকি, সন্ধ্যা চিরকুমার-সভার অনেক পূর্বেই সৃজন হয়েছে, সে আমাদের সভাপতি চন্দ্ৰ বাবুর নিয়ম মানে না রাসিক । সে, যে চন্দ্রের নিয়ম মানে তার নিয়মই আলাদা। আপনার কাছে খুলে বলি, হাসবেন না শ্ৰীশবাবু, আমার একতলার ঘরে কায়ক্লেশে একটি জানলা দিয়ে অল্প একটু জ্যোৎস্না আসে - শুক্লািসন্ধ্যায়। সেই জ্যোৎস্নার শুভ্ৰ রেখাটি যখন আমার বক্ষের উপর এসে পড়ে তখন মনে হয় কে আমার কাছে কী খবর পাঠালে গো ! শুভ্র একটি হংসদূত কোন বিরহিণীর হয়ে এই চিরবিরহীর কানে কানো বলছেঃ অলিন্দে কালিন্দীকমলসুরভোঁ কুঞ্জবসতেরবসন্তীং বসন্তীনবপরিমালোদগার চিকুরাং। ত্বদ্যুৎসঙ্গে লীনাং মদমুকুলিতাক্ষীং পুনরিম্যাং কদাহং সেবিষো কিসলয়াকলাপব্যজনিনী । শ্ৰীশ। বেশ বেশ রসিকবাবু, চমৎকার! কিন্তু ওর মানেটা বলে দিতে হবে । ছন্দের ভিতর দিয়ে ওর রসের গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু অনুস্বার বিসর্গ দিয়ে একেবারে এটে বন্ধ করে রেখেছে। রসিক। বাংলায় একটা তৰ্জমাও করেছি, পাছে সম্পাদকরা খবর পেয়ে হুড়াহুড়ি লাগিয়ে দেয়