পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

と○こ রবীন্দ্র-রচনাবলী নির্মলা। হয়েছে কী ? বোধ হয়। পূৰ্ণবাবু চিরকুমার-সভা ছেড়ে দেবেন। তাই এত ভূমিকা করছেন। লক্ষ্য করে দেখেছ বােধ হয়, পূৰ্ণবাবু আজকাল কুমারসভার কোনাে কাজই করে উঠতে পারেন না। চন্দ্ৰ। ‘দেব, আপনি যে আদর্শ আমাদের সম্মুখে ধরিয়াছেন তাহা অত্যুচ্চ, যে উদ্দেশ্য আমাদের মস্তকে স্থাপন করিয়াছেন তাহা গুরুভার— সে আদর্শ এবং সেই উদ্দেশ্যের প্রতি এক মুহূর্তের জন্য ভক্তির অভাব হয় নাই, কিন্তু মাঝে মাঝে শক্তির দৈন্য অনুভব করিয়া থাকি তাহা শ্ৰীচরণ-সমীপে নির্মলা। আমার বোধ হয়, সকল বড়ো কাজেই মানুষ মাঝে মাঝে আপনার অক্ষমতা অনুভব করে হতাশ হয়ে পড়ে, শ্রান্ত মন এক-একবার বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়— কিন্তু সে কি বরাবর থাকে ? চন্দ্ৰ। 'সভা হইতে গৃহে ফিরিয়া আসিয়া যখন কার্যে হাত দিতে যাই তখন সহসা নিজেকে একক মনে হয়, উৎসাহ যেন আশ্রয়হীন লতার মতো লুণ্ঠিত হইয়া পড়িতে চাহে।” নির্মল, আমরা তো ঠিক এই কথাই বলছিলেম । নির্মলা। পূৰ্ণবাবু যা লিখেছেন সেটা সত্য, মানুষের সঙ্গ না হলে কেবলমাত্ৰ সংকল্প নিয়ে উৎসাহ জাগিয়ে রাখা শক্ত । চন্দ্র। “আমার ধৃষ্টতা মার্জনা করিবেন, কিন্তু অনেক চিন্তা করিয়া এ কথা স্থির বুঝিয়াছি, কুমারব্ৰত সাধারণ লোকের জন্য নহে— তাহাতে বল দান করে না, বল হরণ করে। স্ত্রী পুরুষ পরস্পরের দক্ষিণ হস্ত— তাহারা মিলিত থাকিলে তবেই সম্পূর্ণরূপে সংসারের সকল কাজের উপযোগী হইতে পারে।” তোমার কী মনে হয় নির্মল ? ( নিৰ্মলা নিরুত্তর ) অক্ষয়বাবুও এই কথা নিয়ে সেদিন আমার সঙ্গে তর্ক করছিলেন, তার অনেক কথার উত্তর দিতে পারি নি। নির্মলা । তা হতে পারে। বোধ হয় কথাটার মধ্যে অনেকটা সত্য আছে। মতে শ্রেষ্ঠ কর্তব্য ।” নির্মলা। এ কথাটা কিন্তু পূৰ্ণবাবু বেশ বলেছেন। চন্দ্র। আমিও কিছুদিন থেকে মনে করছিলেম কুমারব্রত গ্রহণের নিয়ম উঠিয়ে দেব। নির্মলা। আমারও বোধ হয় উঠিয়ে দিলে মন্দ হয় না, কী বল মামা ? অন্য কেউ কি আপত্তি করবেন ? অবলাকান্তবাবু, শ্ৰীশবাবু— চন্দ্র। আপত্তির কোনো কারণ নেই। নির্মলা। তবু একবার অবলাকান্তবাবুদের মত নিয়ে দেখা উচিত। চন্দ্ৰ। মত তো নিতেই হবে। ( পত্রপাঠ ) ‘এ পর্যন্ত যাহা লিখিলাম সহজে লিখিয়াছি, এখন যাহা বলিতে চাহি তাহা লিখিতে কলম সরিতেছে না।” নির্মলা। মামা, পূৰ্ণবাবু হয়তো কোনো গোপনীয় কথা লিখছেন, তুমি চেচিয়ে পড়ছ। কেন ? চন্দ্র। ঠিক বলেছ ফেনি ! (আপন-মনে পাঠ ) কী আশ্চর্য! আমি কি সকল বিষয়েই অন্ধ ! এতদিন তো আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। নির্মল, পূৰ্ণবাবুর কোনো ব্যবহার কি কখনো তোমার কাছে নির্মলা। হা, পূৰ্ণবাবুর ব্যবহার আমার কাছে মাঝে মাঝে অত্যন্ত নির্বোধের মতো ঠেকেছিল। চন্দ্র। অথচ পূৰ্ণবাবু খুব বুদ্ধিমান। তা হলে তোমাকে খুলে বলি— পূৰ্ণবাবু বিবাহের প্রস্তাব করে নির্মলা । তুমি তো তার অভিভাবক নও— তোমার কাছে প্ৰস্তাব— চন্দ্র। আমি যে তোমার অভিভাবক— এই পড়ে দেখো । নির্মলা । ( পত্ৰ পড়িয়া রক্তিমমুখে ) এ হতেই পারে না। চন্দ্র । আমি তাকে কী বলব ? নির্মলা। বোলো কোনোমতে হতেই পারে না।