পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

r് ভারতবষ Գ ( S সম্প্রতি শ্ৰীযুক্ত চারুচন্দ্ৰ বসু মহাশয় ধম্মপদং গ্রন্থের অনুবাদ করিয়া দেশের লোকের কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন। আশা করি, তিনি এইখানেই ক্ষান্ত হইবেন না। একে একে চারুবাবুর প্রতি আমাদের একটা অনুরোধ এই যে, অনুবাদটি মূলের সঙ্গে একেবারে কথায় কথায় মিলাইয়া করিলে ভালো হয়— যেখানে দুর্বোধি হইয়া পড়িবে সেখানে টীকার সাহায্যে বুঝাইয়া দিলে কোনো ক্ষতি হইবে না। অনুবাদ যদি স্থানে স্থানে ব্যাখ্যার আকার ধারণ করে তবে অন্যায় হয়, কারণ, ব্যাখ্যায় অনুবাদকের ভ্ৰম থাকিতেও পারে- এইজন্য অনুবাদ ও ব্যাখ্যা স্বতন্ত্র রাখিয়া দিলে পাঠককে বিচার করিবার অবকাশ দেওয়া হয়। মূলের যে-সকল কথার অর্থ সুস্পষ্ট নহে অনুবাদে তাহা যথাযথ রাখিয়া দেওয়াই কর্তব্য মনে করি। গ্রন্থের প্রথম শ্লোকটিই তাহার দৃষ্টান্তস্থল। মূলে আছে— মনোপুৰ্ব্ববঙ্গমা ধম্মা মনোসেটঠা মনোময়া। চারুবাবু ইহার অনুবাদে লিখিয়াছেন— মনই ধৰ্মসমূহের পূর্বগামী, মনই ধৰ্মসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, এবং ধর্ম মন হইতে উৎপন্ন হয়। যদি মূলের কথাগুলিই রাখিয়া লিখিতেন ‘ধৰ্মসমূহ মনঃপূর্বঙ্গম, মনঃশ্রেষ্ঠ, মনোময়’, তবে মূলের অস্পষ্টতা লইয়া পাঠকগণ অর্থ চিন্তা করিতেন। ‘মনই ধৰ্মসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ' বলিলে ভালো অর্থগ্রহ হয় না, সুতরাং এরূপ স্থলে মূল কথাটা অবিকৃত রাখা উচিত। অক্কোচ্ছি। মং অবধি মং অজিনি মং অহাসি মে । যে তং ন উপনযহন্তি বেরং তে সূপসম্মতি। ইহার অনুবাদে আছে— আমাকে তিরস্কার করিল, আমাকে প্ৰহার করিল, আমাকে পরাস্ত করিল, আমার দ্রব্য অপহরণ করিল, এইরূপ চিন্তা যাহারা মনে স্থান দেয় না, তাহাদের বৈরাভার দূর হইয়া যায়। “এইরূপ চিন্তা যাহারা মনে স্থান দেয় না” বাক্যটি ব্যাখ্যা, প্রকৃত অনুবাদ নহে; বোধ হয় ‘যে । ইহাতে লাগিয়া থাকে না” বলিলে মূলের অনুগত হইত। অর্থসুগমতার অনুরোধে অতিরিক্ত কথাগুলি ব্র্যাকেটের মধ্যে দিলে ক্ষতি হয় না ; যথা, ‘আমাকে গালি দিল, আমাকে মারিল, আমাকে জিতিল, আমার (ধন) হরণ করিল, ইহা যাহারা (মনে) বাধিয়া না রাখে, তাহাদের বৈর শান্ত হয়।” এই গ্রন্থে মূলের অন্বয়, সংস্কৃত ভাষান্তর ও বাংলা অনুবাদ থাকাতে ইহা পাঠকদের ও ছাত্ৰগণের পক্ষে বিশেষ উপযোগী হইয়াছে। এই গ্ৰন্থ অবলম্বন করিলে পালিভাষা অধ্যয়নের বিশেষ সাহায্য হইতে পরিবে । এইখানে বলা আবশ্যক, সম্প্রতি ত্ৰিবেণী কপিলাশ্রম হইতে শ্ৰীমৎ হরিহরানন্দ স্বামীকর্তৃক ধৰ্ম্মপদং সংস্কৃত ও বাংলাভাষায় অনুবাদিত হইয়াছে। আশা করি, এই গ্ৰন্থখানিও এই ধর্মশাস্ত্রপ্রচারের সাহায্য করিবে । ८डाछ >७>२ বজয়া-সম্মিলন বাংলাদেশে কতকাল হইতে কত বিজয়া দশমীর পরে ঘরে ঘরে গ্ৰীতিসম্মিলনের সুধাস্রোত প্রবাহিত হইয়া গেছে, কিন্তু অদ্য এখানে এই-যে মিলনসভা আহূত হইয়াছে, আশা করি, আমাদের দেশের ইতিহাসে এই সভা চিরদিন স্মরণীয় হইয়া থাকিবে। আশা করি, আজ হইতে বাংলাদেশের বিজয়া-সম্মিলন যে-একটি নূতন জীবন লইয়া অপূর্বভাবে পরিপুষ্ট হইয়া উঠিল, সেই জীবনধারা কোনাে দুদিনে কোনাে সুদূরকালেও যেন শীর্ণ না হয় ; আমাদের সৌভাগ্যক্রমে যে মিলন-উৎস