পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ Հ» N2 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী করিব ; অবশেষে এমন হইবে যে পৃথিবীর চারি দিক হইতে ধর্মার্থীরা ভারতবর্ষের তীর্থক্ষেত্রে ব্ৰহ্মদৰ্শন-লালসায় দলে দলে আগমন করিতে থাকিবে। তখনই রাজা রামমোহন রায়ের জয় । তিনি যে সত্যের পতাকা ধরিয়া ভারতভূমিতে দাড়াইয়াছিলেন সেই পুরাতন সত্যের জয়। তখন সেই রামমোহন রায়ের জয়ে, ঋষিদের জয়ে, সত্যের জয়ে, ব্ৰহ্মের জয়ে আমাদের ভারতবর্ষেরই জয়। N S SSS মহর্ষির জন্মোৎসব ৩রা জ্যৈষ্ঠ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের জন্মোৎসবে পঠিত পূজনীয় পিতৃদেবের আজ অষ্টাশীতিতম সাংবাৎসরিক জন্মোৎসব । এই উৎসবদিনের পবিত্ৰতা আমরা বিশেষভাবে হৃদয়ের মধ্যে গ্ৰহণ করিব । বহুতর দেশকে সঞ্জীবনস্পর্শে উর্বর করিয়া, পুণ্যধারায় বহুতর গ্রামনগরীর পিপাসা মিটাইয়া, অবশেষে জাহ্নবী যেখানে মহাসমুদ্রের প্রত্যক্ষসম্মুখে আপনি সুদীর্ঘ পর্যটন অতলস্পর্শ শান্তির মধ্যে সমাপ্ত করিতে উদ্যত হন, সেই সাগরসংগমস্থল তীর্থস্থান। পিতৃদেবের পূতজীবন অদ্য আমাদের সম্মুখে সেই তীর্থস্থান অবারিত করিয়াছে। র্তাহার পুণ্যকর্মরত দীর্ঘজীবনের একাগ্ৰধারা অদ্য যেখানে তাঁটহীন সীমাশূন্য বিপুল বিরামসমুদ্রের সম্মুখীন হইয়াছে সেইখানে আমরা ক্ষণকালের জন্য নতশিরে স্তব্ধ হইয়া দণ্ডায়মান হইব। আমরা চিন্তা করিয়া দেখিব, বহুকাল পূর্বে একদিন স্বৰ্গ হইতে কোন শুভসূর্যকিরণের আঘাতে অকস্মাৎ সুপ্তি হইতে জাগ্রত হইয়া, কঠিন তুষারবেষ্টনকে অশ্রুধারায় বিগলিত করিয়া, এই জীবন আপনি কল্যাণ যাত্রা আরম্ভ করিয়াছিল- তখন ইহার ক্ষীণ স্বচ্ছ ধারা কখনো আলোক, কখনো অন্ধকার, কখনো আশা, কখনো নৈরাশ্যের মধ্য দিয়া দুৰ্গম পথ কাটিয়া কাটিয়া চলিতেছিল। বাধা প্রতিদিন বৃহদাকার হইয়া দেখা দিতে লাগিল, কঠিন প্রস্তরপিণ্ড-সকল পাথরোধ করিয়া দাড়াইল— কিন্তু সে-সকল বাধায় স্রোতকে রুদ্ধ না করিতে পারিয়া দ্বিগুণবেগে উদবেল করিয়া তুলিল, দুঃসাধ্য দুৰ্গমতা সেই দুর্বার বলের নিকট মস্তক নত করিয়া দিল। এই জীবনধারা ক্রমশ বৃহৎ হইয়া, বিস্তৃত হইয়া, লোকালয়ের মধ্যে অবতরণ করিল, দুই কুলকে নবজীবনে অভিষিক্ত করিয়া চলিল, বাধা মানিল না, বিশ্রাম করিল না, কিছুতেই তাহাকে লক্ষ্য হইতে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিল না— অবশেষে আজ সেই একনিষ্ঠ অনন্যপরায়ণ জীবনস্রোত সংসারের দুই কুলকে আচ্ছন্ন করিয়া, অতিক্ৰম করিয়া উঠিয়াছে— আজি সে তাহার সমস্ত চেষ্টা, সমস্ত চাঞ্চল্যকে পরমপরিণামের সম্মুখে প্রশান্ত করিয়া পরিপূর্ণ আত্মবিসর্জনের দিকে আপনাকে প্রসারিত করিয়াছে— অনন্ত জীবনসমুদ্রের সহিত সার্থক জীবনধারার এই সুগভীর সম্মিলনৰ্দশ্য অদ্য আমাদের ধ্যাননেত্রের সম্মুখে উদঘাটিত হইয়া আমাদিগকে ধন্য করুক। অমৃতপিপাসা ও অমৃতসন্ধানের পথে ঐশ্বর্য একটি প্রধান অন্তরায়। সামান্য সোনার প্রাচীর উচ্চ হইয়া উঠিয়া আমাদের দৃষ্টি হইতে অনন্ত আকাশের অমৃত-আলোককে রুদ্ধ করিয়া দাড়াইতে পারে । ধনসম্পদের মধ্যেই দীনহাদয় আপনার সার্থকতা উপলব্ধি করিতে থাকে ; সে বলে, “এই তো আমি কৃতাৰ্থ হইয়াছি, দশে আমার স্তব করিতেছে, দেশে আমার প্রতাপ বিকীর্ণ হইতেছে, বাহিরে আমার আড়ম্বর অভ্ৰভেদ করিতেছে, ঘরে আমার আরামশায়ন প্রতিদিন স্তরে স্তরে রাশীকৃত হইয়া উঠিতেছে- আমার আর কী চাই!” হায় রে দরিদ্র, নিখিল মানবের অন্তরাত্মা যখন ক্ৰন্দন করিয়া উঠিয়াছে “যাহাতে আমি অমর না হইব তাহা লইয়া আমি কী করিব, যেনাহং নামৃত স্যাং কিমহং তেন কুর্যাম— সপ্তলোক যখন অন্তরীক্ষে উর্ধর্বকররাজি প্রসারিত করিয়া প্রার্থনা করিতেছে “আমাকে সত্য দাও, আলোক দাও, অমৃত দাও, আসতো মা সদগময়, তমসো মা জ্যোতিৰ্গময়, মৃত্যোর্মামৃতং