পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় রচনাবলীর বর্তমান খণ্ডে মুদ্রিত গ্রন্থগুলির প্রথম সংস্করণ, অন্যান্য বিশেষ সংস্করণ, বর্তমানে স্বতন্ত্র গ্রন্থাকারে প্রচলিত সংস্করণ, রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী-সংস্করণ, ইহাদের পার্থক্য সংক্ষেপে ও সাধারণভাবে নির্দেশ করা গেল । রবীন্দ্র-রচনাবলীর বিভিন্ন গ্রন্থে ভূমিকা ও সূচনাগুলি রবীন্দ্র-রচনাবলীর জন্য কবি নূতন লিখিত । বিশ্বভারতী-প্রচলিত রবীন্দ্র-রচনাবলীর তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড বর্তমান গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হইল । সোনার তরী সোনার তরী। ১৩০০ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । এই গ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘সোনার তরী’র* অর্থ-ব্যাখ্যা লইয়া এক সময় অনেক বিতর্ক হইয়াছে । কবি স্বয়ং নানা প্রসঙ্গে এই কবিতাটির যে ব্যাখ্যা করিয়াছেন নিম্নে তাহা সংকলিত হইল : চারুচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়কে লিখিত একটি পত্রে রবীন্দ্ৰনাথ ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোচনা-প্রসঙ্গে বলিতেছেন এক জাতের কবিতা আছে যা লেখা হয় বাহিরের দরজা বন্ধ করে । সেগুলো হয়তো অতীতের স্মৃতি বা অনাগতের প্রত্যাশা, বাসনার অতৃপ্তি বা আকাঙক্ষার আবেগ, কিংবা রূপরচনার আগ্রহের উপর প্রতিষ্ঠিত । আবার এক জাতের কবিতা আছে যা মুক্তদ্বার অন্তরের সামগ্ৰী, বাইরের সমস্ত কিছুকে আপনার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ।-- যেমন সোনার তরী কবিতাটি । ছিলাম তখন পদ্মার বোটে । জলভারনত কালো মেঘ আকাশে, ও-পারে ছায়াঘন তরুশ্রেণীর মধ্যে গ্রামগুলি, বর্ষার পরিপূর্ণ পদ্মা খরবেগে বয়ে চলেছে, মাঝে মাঝে পাক খেয়ে ছুটেছে ফেনা । নদী অকালে কুল ছাপিয়ে চরের ধান দিনে দিনে ডুবিয়ে দিচ্ছে। কঁচা ধানে বােঝাই চাষীদের ডিঙিনীেক তুহু করে স্রোতের উপর দিয়ে ভেসে চলেছে। ঐ অঞ্চলে এই চরের ধানকে বলে জলি ধান । আর কিছু দিন হলেই পাকত । ভরা পদ্মার উপরকার ঐ বাদল-দিনের ছবি সোনার তরী কবিতার অন্তরে প্রচ্ছন্ন এবং তার ছন্দে প্ৰকাশিত । [১৩৩৯] --রবিরশ্মি সোনার তরী কবিতার কল্পনা-কাল শ্রাবণ ও রচনা-কাল ফায়ুন, এ সম্বন্ধে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্ৰনাথ লেখেন তুমি পঞ্জিকা মিলিয়ে যদি কবিতার তাৎপর্য নির্ণয় করতে চাও তো বিপন্ন হবে । বুধবারের পর বৃহস্পতিবার আসে অত্যন্ত সাধারণ নিয়মে । সেটাকে অবজ্ঞা কোরো । আমাদের জীবনে সুতরাং সাহিত্যেও হয়তো কোনো-একটা বিশেষ বুধ বা বৃহস্পতিবার সপ্তাহ ডিঙিয়ে চব্বিশ ঘণ্টাকে উপেক্ষা করেই আসন রক্ষা করে । যেদিন বর্ষার অপরাহুে খরস্রোত পদ্মার উপর দিয়ে । কঁচা ধানে ডিঙিনৌকা বোঝাই করে মগ্নপ্ৰায় চর থেকে চাষীরা এ পারে চলে আসছে সে দিনটা ১ প্ৰচল ‘সোনার তরী কাব্যের গ্রন্থপরিচয়ে বীরেশ্বর গোস্বামীকে লেখা (৯ অগ্রহায়ণ ১।৩।১৩) রবীন্দ্রনাথের এক পত্র দ্রষ্টব্য। উল্লেখযোগ্য যে, “সোনার তরী কবিতার বহুদিন ধরিয়া যেমন সুতীব্ৰ নিন্দাবাদ হইয়াছিল, “সাধনায় কবিতাটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য পত্রে তেমনি উচ্ছসিত প্ৰশংসাও হইয়াছিল ।