পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br S SR রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী লিখেছেন তিনি মনে করেছেন, তার গৃহকাৰ্যনিরতা অন্তঃপুরবাসিনী জন্মভূমি, তার সমসাময়িক পাঠকমণ্ডলী, তার কবিতাগুলির ঠিক ভাবগ্রহ করতে পারবে না— তার যে কতখানি মূল্য সে তাদের জ্ঞানগোচর নয়- . অতএব এখনকার মতো। এ-সমস্ত পথেই ফেলে দেওয়া যাচ্ছে, তোমরাও অবহেলা করো আমিও অবহেলা করি— কিন্তু এ রাত্রি যখন পোহাবে তখন “পস্টারিটি এসে এগুলি কুড়িয়ে নিয়ে দেশে বিদেশে চলে যাবে । কিন্তু তাতে ঐ জেলে লোকটার মনের আক্ষেপ কি মিটবে । যাই হোক, ‘পস্টারিটি" যে অভিসারিণী রমণীর মতো দীর্ঘরাত্রি ধরে ধীরে ধীরে কবির দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং হয়তো নিশিশেষে এসে উপস্থিত হতেও পারে, এ সুখকল্পনাটুকু কবিকে ভোগ করতে দিতে কারো বোধ হয় আপত্তি না হতেও পারে । so airly Sts. —ছিন্নপত্ৰ “ দেউল’ সম্বন্ধে রবীন্দ্ৰনাথ ঐ চিঠিতেই বলেন— সেই মন্দিরের কবিতার ঠিক অর্থটা কী ভালো মনে পড়ছে না । বোধ হয় সেটা সত্যিকার মন্দির সম্বন্ধে । অর্থাৎ, যখন কোণে বসে বসে কতকগুলো কৃত্ৰিম কল্পনার দ্বারা আপনার দেবতাকে আচ্ছন্ন করে নিজের মনটাকেও একটা অস্বাভাবিক সুতীব্র অবস্থায় নিয়ে যাওয়া গেছে এমন সময় যদি হঠাৎ একটা সংশয়বজ পড়ে, সেই সমস্ত সুদীর্ঘকালের কৃত্রিম প্রাচীর ভেঙে যায়, তখন, হঠাৎ প্রকৃতির শোভা, সূর্যের আলোক এবং বিশ্বজনের কল্লোলগান এসে তন্ত্রমন্ত্র ধূপধুনার স্থান অধিকার করে এবং তখন দেখতে পাই— সেই যথার্থ আরাধনা এবং তাতেই দেবতার তুষ্টি । {৩০ আষাঢ় ১৮৯৩] —ছিন্নপত্র ‘দুই পাখি'র প্রসঙ্গে নিম্নসংকলন প্ৰণিধানযোগ্য— বাড়ির বাহিরে আমাদের যাওয়া বারণ ছিল ; এমন-কি, বাড়ির ভিতরেও আমরা সর্বত্র যেমন খুশি যাওয়া-আসা করিতে পারিতাম না । সেইজন্য বিশ্বপ্রকৃতিকে আড়াল-আবড়াল হইতে দেখিতাম । বাহির বলিয়া একটি অনন্তপ্রসারিত পদার্থ ছিল যাহা আমার অতীত, অথচ যাহার রূপ শব্দ গন্ধ দ্বার-জানালার নানা ফাক-ফুকর দিয়া এ দিক ও দিক হইতে আমাকে চকিতে ছুইয়া যাইত ; সে যেন গরাদের ব্যবধান দিয়া নানা ইশারায় আমার সঙ্গে খেলা করিবার নানা চেষ্টা করিত । সে মুক্ত, আমি ছিলাম বদ্ধ, মিলনের উপায় ছিল না, সেইজন্য প্ৰণয়ের আকর্ষণ ছিল প্রবল। আজ সেই খড়ির গণ্ডি [ভূত্য শ্যামের আঁকা] মুছিয়া গেছে, কিন্তু গণ্ডি তবু ঘোচে নাই । দূর এখনো দূরে, বাহির এখনো বাহিরেই। বড়ো হইয়া যে কবিতাটি লিখিয়াছিলাম তাঁহাই মনে 1CAt —ঘর ও বাহির । জীবনস্মৃতি “ঝুলন’ কবিতাটি সম্পর্কে ‘সাহিত্যের পথে’ (১৩৪৩) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেন— বদ্ধ জল। যেমন বোবা, গুমটি হাওয়া যেমন আত্মপরিচয়হীন, তেমনি প্রাত্যহিক আধমরা অভ্যাসের একটানা আবৃত্তি ঘা দেয় না চেতনায়, তাতে সত্তাবোধ নিস্তেজ হয়ে থাকে । তাই দুঃখে বিপদে বিদ্রোহে বিপ্লবে অপ্রকাশের আবেশ কাটিয়ে মানুষ আপনাকে প্রবল আবেগে উপলব্ধি করতে চায় | একদিন এই কথাটি আমার কোনো একটি কবিতায় লিখেছিলেম । বলেছিলেম, আমার