পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brミミ রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশ্বমানবের মধ্যে সে আপনার সফলতা চায় নাই ; সে আপনার ঘরের সুখ, ঘরের সম্পদের জন্যই কড়ি সংগ্ৰহ করিয়াছিল। কিন্তু সেই মেঠো পথ, সেই ঘোরো সুখদুঃখের দিক হইতে কে তাহাকে জোর করিয়া পাহাড়-পর্বত-অধিত্যক-উপত্যকার দুৰ্গমতার মধ্য দিয়া টানিয়া লইয়া গোঠে ধায় গোরু, বধু জল আনে একদা প্ৰথম প্ৰভাতবেলায় সে পথে বাহির হইনু হেলায়— মনে ছিল, দিন কাজে ও খেলায় কাটায়ে ফিরিব রাতে । পদে পদে তুমি ভুলাইলে দিক, কোথা যাব আজি নাহি পাই ঠিক, ক্লান্তহৃদয় ভ্ৰান্ত পথিক এসেছি। নূতন দেশে । কখনো উদার গিরির শিখরে কীভূ বেদনার তমোগহবরে চিনি না যে পথ সে পথের পরে চলেছি পাগলবেশে । এই-যে কবি, যিনি আমার সমস্ত ভালোমন্দ, আমার সমস্ত অনুকূল ও প্রতিকূল উপকরণ লইয়া আমার জীবনকে রচনা করিয়া চলিয়াছেন, তাহাকেই আমার কাব্যে আমি ‘জীবনদেবতা নাম দিয়াছি । তিনি যে কেবল আমার এই ইহজীবনের সমস্ত খণ্ডতাকে ঐক্যদান করিয়া বিশ্বের সহিত তাহার সামঞ্জস্য স্থাপন করিতেছেন, আমি তাহা মনে করি না— আমি জানি, অনাদিকাল হইতে বিচিত্র বিস্মৃত অবস্থার মধ্য দিয়া তিনি আমাকে আমার এই বর্তমান প্রকাশের মধ্যে উপনীত করিয়াছেন ; সেই বিশ্বের মধ্য দিয়া প্রবাহিত অস্তিত্বধারার বৃহৎ স্মৃতি তাহাকে অবলম্বন করিয়া আমার অগোচরে আমার মধ্যে রহিয়াছে।-- আমার অন্তর্নিহিত যে সৃজনশক্তি- আমার জীবনের সমস্ত সুখদুঃখকে সমস্ত ঘটনাকে ঐক্যদান তাৎপর্যদান করিতেছে, আমার রূপর পান্তর-জন্মজন্মান্তরকে একসূত্রে গাঁথিতেছে, যাহার মধ্য দিয়া বিশ্বচরাচরের মধ্যে ঐক্য অনুভব করিতেছি, তাহাকেই ‘জীবনদেবতা’ নাম দিয়া লিখিয়াছিলাম ওহে অন্তরতম, আসি অস্তরে মম ! দুঃখসুখের লক্ষ ধারায়