পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S९० রবীন্দ্র-রচনাবলী রামচন্দ্র । তার পরে ? রমাই। জানি না, কী কারণে চোরের যথেষ্ট ভয় হল না তার পর রাত্রেও ঘরে এল। গিন্নি বললেন, “সর্বনাশ হল, ওঠে।” কর্তা বললেন, “তুমি ওঠে না।” গিন্নি বললেন, “আমি উঠে কী করব ?” কর্তা বললেন, “কেন, ঘরে একটা আলো জালাও না, কিছু যে দেখতে পাচ্ছি না।” গিন্নি বিষম ক্রুদ্ধ ; কর্তা ততোধিক ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “দেখে দেখি । তোমার জন্যই তো যথাসর্বস্ব গেল। আলোটা জালাও । বন্দুকটা আনে৷ ” ইতিমধ্যে চোর কাজকর্ম সেরে বললে, “মশাই, এক ছিলিম তামাক খাওয়াতে পারেন ? বড়ে পরিশ্রম হয়েছে।” কর্তা বিষম ধমক দিয়ে বললেন, “রোস বেট ! আমি তামাক সেজে দিচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে আসবি তো এই বন্দুকে তোর মাথা উড়িবে দেব।” তামাক খেয়ে চোর বললে, “মশাই আলোটা যদি জালেন তো বড়ো উপকার হয়। সিদকাটিটা পড়ে গেছে, খুজে পাচ্ছি না।” সেনাপতি বললেন, “বেটার ভয় হয়েছে। তফণতে থাক, কাছে আসিস নে।” বলে তাড়াতাড়ি আলো জালিয়ে দিলেন। ধীরে সুস্থে জিনিসপত্র বেঁধে চোর তো চলে গেল। কর্তা গিন্নিকে বললেন, “বেটা বিষম ভয় পেয়েছে।” রামচন্দ্র। রমাই, শুনেছ আমি শ্বশুরালয়ে যাচ্ছি ? রমাই। (মুখভঙ্গি করিয়া) অসারং খলু সংসারং সারং শ্বশুরমন্দিরং ( সকলের হাস্ত ) কথাটা মিথ্যা নয় মহারাজ ! ( দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ) শ্বশুরমন্দিরের সকলই সার— আহারটা, সমাদরটা— দুধের সরটি পাওয়া যায়, মাছের মুড়োটি পাওয়া যায়— সকলই সারপদার্থ ! কেবল সর্বাপেক্ষ অসার ওই যিনি— রামচন্দ্র । ( হাসিয়া ) সে কী হে, তোমার অর্ধাঙ্গ— রমাই। ( জোড়হস্তে ব্যাকুলভাবে ) মহারাজ, তাকে অর্ধাঙ্গ বলবেন না। তিন জন্ম তপস্যা করলে আমি বরঞ্চ একদিন তার অর্ধাঙ্গ হতে পারব এমন ভরসা আছে। আমার মতন পাচটা অর্ধাঙ্গ জুড়লেও তার আয়তনে কুলোয় না। [ যথাক্রমে সকলের হাস্য রামচন্দ্র। আমি তো শুনেছি, তোমার ব্রাহ্মণী বড়োই শাস্তস্বভাবা, ঘরকন্নায় বিশেষ পটু। রমাই। সে কথায় কাজ কী ! ঘরে আর সকল রকমই জঞ্জাল আছে, কেবল আমি তিষ্ঠতে পারি না। প্রত্যুষে গৃহিণী এমনি বেঁটিয়ে দেন যে একেবারে মহারাজের দুয়ারে এসে পড়ি ! [ সকলের হাস্য রামচন্দ্র। ওহে রমাই, তোমাকে এবার যে যেতে হবে, সেনাপতিকে সঙ্গে