পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ՏԵ-(t পোহয় । ঘোষাল-পরিবারে সুর্যোদয় দেখা দিল অবিনাশের বাপ মধুসূদনের জোর কপালে । ९ মধুসূদনের বাপ আনন্দ ঘোষাল রজবপুরের আড়তদারদের মুহুরি। মোটা ভাত মোটা কাপড়ে সংসার চলে। গৃহিণীদের হাতে শাখা-খাড়, পুরুষদের গলায় রক্ষণমন্ত্রের পিতলের মাদুলি আর বেলের আট দিয়ে মাজ খুব মোটা পইতে। ব্রাহ্মণ-মর্যাদায় প্রমাণ ক্ষীণ হওয়াতে পইতেটা হয়েছিল প্রমাণসই । মফস্বল ইস্কুলে মধুসূদনের প্রথম শিক্ষা। সঙ্গে সঙ্গে অবৈতনিক শিক্ষা ছিল নদীর ধারে, অাড়তের প্রাঙ্গণে, পাটের গণটের উপর চড়ে বসে। যাচনদার, খরিদদার, গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানদের ভিড়ের মধ্যেই তার ছুটি– যেখানে বাজারে টিনের চালাঘরে সাজানো থাকে সারবাধ গুড়ের কলসী, আঁাটিবাধা তামাকের পাতা, গাটবাধা বিলিতি র্যাপার, কেরোসিনের টিন, সরষের ঢিবি, কলাইয়ের বস্তা, বড়ে বড়ো তৌল-দাড়ি আর বাটখারা, সেইখানে ঘুরে তার যেন বাগানে বেড়ানোর আনন্দ । বাপ ঠাওরালে ছেলেটার কিছু হবে। ঠেলেঠলে গোটা দুৰ্ত্তিন পাস করাতে পারলেই ইস্কুলমাস্টারি থেকে মোক্তারি ওকালতি পর্যন্ত ভদ্রলোকদের যে কয়ট মোক্ষতীর্থ তার কোনো-না-কোনোটাতে মধু ভিড়তে পারবে। অন্য তিনটে ছেলের ভাগ্যসীমারেখা গোমস্তাগিরি পর্যন্তই পিলপে-গাড়ি হয়ে রইল। তারা কেউ-বা আড়তদারের, কেউ-ব৷ তালুকদারের দফতরে কানে কলম গুজে শিক্ষানবিশিতে বসে গেল। আনন্দ ঘোষালের ক্ষীণ সর্বশ্বের উপর ভর করে মধুসূদন বাস নিলে কলকাতার মেসে । অধ্যাপকের অাশা করেছিল পরীক্ষায় এ ছেলে কলেজের নাম রাখবে। এমন সময় বাপ গেল মারা । পড়বার বই, মায় নোটবই সমেত, বিক্রি করে মধু পণ * করে বসল এবার সে রোজগার করবে। ছাত্রমহলে সেকেণ্ড-হ্যাও বই বিক্রি করে ব্যাবসা হল শুরু। মা কেঁদে মরে— বড়ো তার আশা ছিল, পরীক্ষাপাসের রাস্ত দিয়ে ছেলে ঢুকবে ‘ভদোর শ্রেণীর বৃহের মধ্যে। তার পরে ঘোষাল-বংশদণ্ডের আগায় উড়বে কেরানিবৃত্তির জয়পতাকা । ছেলেবেলা থেকে মধুসূদন যেমন মাল বাছাই করতে পাকা, তেমনি তার বন্ধু