পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ՏԵ-Գ লোহা । বাজারের লোক অবাক! ভাবলে, “এই রে । হাতে কিছু জমেছিল, সেটা সইবে কেন । এবার বদহজমের পাল, কারবার মরণদশায় ঠেকল বলে।’ এবারও মধুসূদনের হিসেবে ভুল হল না। দেখতে দেখতে রজবপুরে ব্যাবসার একটা আওড় লাগল। তার ঘূর্ণিটানে দালালরা এসে জুটল, এল মাড়োয়ারির দল, কুলির আমদানি হল, কল বসল, চিমনি থেকে কুগুলায়িত ধূমকেতু আকাশে আকাশে কালিম বিস্তার করলে । 峨 হিসেবের খাতার গবেষণা না করেও মধুসূদনের মহিমা এখন দূর থেকে খালি-চোখেই ধরা পড়ে। এক সমস্ত গঞ্জের মালিক, পাচিল-ঘেরা দোতলা ইমারত, গেটে শিলাফলকে লেখা ‘মধুচক্র । এ-নাম তার কলেজের পূর্বতন সংস্কৃত অধ্যাপকের দেওয়া। মধুসূদনকে তিনি পূর্বের চেয়ে অকস্মাৎ এখন অনেক বেশি স্নেহ করেন । এইবার বিধবা ম৷ ভয়ে ভয়ে এসে বললে, “বাবা, কবে মরে যাব, বউ দেখে যেতে পারব না কি ?” মধু গম্ভীরমুখে সংক্ষেপে উত্তর করলে, “বিবাহ করতেও সময় নষ্ট, বিবাহ করেও তাই। আমার ফুরসত কোথায় ?” পীড়াপীড়ি করে এমন সাহস ওর মায়েরও নেই, কেননা সময়ের বাজার-দর আছে। সবাই জানে মধুসূদনের এক কথা । আরও কিছুকাল যায়। উন্নতির জোয়ার বেয়ে কারবারের আপিস মফস্বল থেকে কলকাতায় উঠল। নাতিনাতনীর দর্শনসুখ সম্বন্ধে হাল ছেড়ে দিয়ে মা ইহলোক ত্যাগ করলে। ঘোষাল-কোম্পানির নাম আজ দেশবিদেশে, ওদের ব্যাবসা বনেদি বিলিতি কোম্পানির গা ঘেঁষে চলে, বিভাগে বিভাগে ইংরেজ ম্যানেজার। মধুসুদন এবার স্বয়ং বললে, বিবাহের ফুরসত হল। কন্যার বাজারে ক্রেডিট তার সর্বোচ্চে। অতিবড়ে অভিমানী ঘরেরও মানভঞ্জন করবার মতো তার শক্তি। চার দিক থেকে, অনেক কুলবর্তী রূপবতী গুণবতী ধনবতী বিদ্যাবতী কুমারীদের খবর এসে পৌছোয়। মধুসূদন চোখ পাকিয়ে বলে, ওই চাটুজ্যেদের ঘরের মেয়ে চাই। ঘা-খাওয়া বংশ, ঘা-খাওয়া নেকড়ে বাঘের মতো, বড়ো ভয়ংকর। お|〉○